শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১৭ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ভাবেরমুড়া অলৌকিক একটি নলকূপের কারণে এখন সারা অঞ্চলে পরিচিতি পাচ্ছে। প্রায় দুই যুগ আগে গ্রামের পানির সংকট মেটানোর উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছিল এই নলকূপ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, হাতল ছাড়া এটি দিনরাত অনবরত পানি সরবরাহ করছে, যা স্থানীয়দের কাছে এক অলৌকিক ঘটনা হিসেবে পরিচিত।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এই নলকূপ শুধু ভাবেরমুড়া গ্রামের মানুষের নয়, আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামেরও প্রধান পানির উৎস। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা থেকেও মানুষ এখানে পানি সংগ্রহ করতে আসেন। কেউ পান করছেন খাবার পানি হিসেবে, কেউ ব্যবহার করছেন ওজুতে, আবার কেউ বিশ্বাসের টানে এ নলকূপের পানি পান করছেন।
স্থানীয় কামাল মিয়া বলেন, “এখানে দরবার শরীফ থাকায় প্রতি মাসে এবং বছরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভক্তরা মাজারে আসেন। তখন ওজু করার বা পানি পান করার সুবিধা খুব কম ছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলে এই নলকূপটি স্থাপন করা হয়।”
অন্য এক স্থানীয়, হারুন মিয়া, জানিয়েছেন, “মাজারের পাশে এই নলকূপ হওয়ায় এবং হাতল ছাড়াই অনবরত পানি ঝরায়, ভক্তরা এটিকে অলৌকিক ভাবছেন। অনেকের বিশ্বাস, এই পানি পান করলে আরোগ্য লাভ হয় এবং মনের আশা পূরণ হয়। কৃষির কাজে ও খরা মৌসুমে এই পানি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।”
এই নলকূপের পানি শুধু গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাচ্ছে না, বরং কৃষি জমিতেও সেচের উৎস হিসেবে কাজ করছে। খরা মৌসুমে অন্যান্য এলাকায় মানুষ পানির জন্য হাহাকার করলেও ভাবেরমুড়ার কৃষকরা এই নলকূপের ওপর নির্ভরশীল।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা শরীফ নামে এক যুবক বলেন, “এটি সত্যিই অলৌকিক। হাতল ছাড়া নলকূপ থেকে পানি ঝরছে। শীতকালে অন্য পুকুর বা খাল খুব ঠান্ডা থাকে, কিন্তু এই নলকূপের পানি গরম থাকে। আমরা এখানে গোসলও করি।”
মাহফুজ নামের এক স্থানীয় আরও জানান, “এই নলকূপ থেকে ঝরছে পানি শুধু মানুষদের জন্য নয়, এটি আশপাশের কৃষি জমিতেও পৌঁছে যাচ্ছে। কয়েক শতাধিক জমিতে এই পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে খরা মৌসুমেও কৃষকরা পানির সংকটে পড়ছেন না।”
ভাবেরমুড়ার গ্রামবাসীর কাছে এই নলকূপ কেবল পানি সরবরাহের উৎস নয়, বরং জীবনের এক অলৌকিক প্রতীক, যা মানুষের বিশ্বাস ও আশা জাগায়।
বিজ্ঞাপন