বুধবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ১১:০০ ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ঢাকা–৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারার নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ২৯ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পোস্টে তিনি জানান, প্রায় ৪৭ লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ হওয়ায় আপাতত আর কোনো অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
বড় বাজেটের নির্বাচনি প্রচারণার প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এই অর্জনকে নতুন ধারার রাজনীতির বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন ডা. জারা। তিনি বলেন, যেখানে অনেক প্রার্থী ১০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে ভোট কেনার চেষ্টা করেন, সেখানে সাধারণ মানুষের ছোট ছোট অনুদানে নির্বাচনি ফান্ড পূরণ হওয়া পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্পষ্ট কাঁপন ধরিয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে ডা. তাসনিম জারা আরও লেখেন, ঢাকা–৯ আসনে প্রায় পাঁচ লাখ ভোটার রয়েছেন। একজন প্রার্থী হিসেবে দিনে ১২ ঘণ্টা হেঁটে প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে পাঁচ মিনিট করে কথা বললেও সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১১০টি পরিবারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। পুরো নির্বাচনি সময়ে বড়জোর চার হাজার পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যাবে, ফলে কয়েক লাখ পরিবারের কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছানো সম্ভব নয়।
এনসিপির এই সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব বলেন, তারা টাকার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করতেই রাজনীতিতে এসেছেন, তাই কোনো পেইড কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে না। মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছাতে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ঢাকা–৯ এর ভোটার না হলেও তাদের আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী বা পরিচিত কেউ না কেউ এই এলাকায় থাকেন। পরিচিত মানুষের একটি কথা পোস্টার, ব্যানার কিংবা অর্থ খরচ করে চালানো প্রচারণার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডা. জারা আরও জানান, তিনি নিয়ম মেনে পোস্টার লাগাননি, যদিও অন্য প্রার্থীরা তা করেছেন। এই অসমতা কাটাতেও একটি ফোন কল বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রেক্ষিতে তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি দুটি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানান। প্রথমত, সপ্তাহে মাত্র ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। দ্বিতীয়ত, পোলিং এজেন্ট হিসেবে কিংবা ভোটের দিন ভোটারদের সহায়তায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান, যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সংগঠিত টিমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকবে।
তিনি বলেন, ভোটের দিন প্রতিটি বুথে এমন সাহসী মানুষের প্রয়োজন, যারা অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবেন না। “আমরা একসঙ্গে প্রমাণ করব, জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কোটি কোটি কালো টাকা কতটা অসহায়”—এভাবেই নিজের প্রত্যয় তুলে ধরেন ডা. তাসনিম জারা।
নির্বাচনি তহবিলের পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। ডা. জারা জানান, তারা কোনো নগদ অনুদান গ্রহণ করছেন না। সব অনুদান একটি মাত্র বিকাশ নম্বর ও একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে, যার রেকর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং ভবিষ্যতে যাচাইযোগ্য হবে।
এ ছাড়া কোন মাধ্যমে কত টাকা এসেছে, সে তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হবে এবং সব নথিপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনুদান নেওয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যক্তিগত কোনো লেনদেন নেই। অ্যাকাউন্ট দুটি নতুন, শূন্য ব্যালেন্স থেকে শুরু হয়েছে এবং শতভাগ অর্থই জনগণের অনুদান—যাতে হিসাবের কোনো অস্পষ্টতা না থাকে।
সবশেষে ডা. তাসনিম জারা জানান, সংগৃহীত অর্থ কোন কোন খাতে এবং কতটুকু ব্যয় করা হবে, তা স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। তার এই উদ্যোগ ও স্বচ্ছতার ঘোষণা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
