শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ | ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ১০:৫৫ ২৮ নভেম্বর ২০২৫
১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত মোট ১০২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮৮ জনকে নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেনাজ হুমায়রা কোহেলী সহ সুপারিশপ্রাপ্ত ১৩ জন প্রার্থীর নাম বাদ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে তীব্র হতাশা, ক্ষোভ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে জরুরি ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তারা।
সুপারিশপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন— তানসেনা হোসেন মনীষা (রাবি), নিশাত মনি (ঢাবি), নাহিম হাসান (ঢাবি), মোঃ রেজাউল ইসলাম (ঢাবি), অনিক আহমেদ (রাবি), মাহমুদুল ইসলাম মুন্না (রাবি), সাদিকুর রহমান (গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), মামুন হোসেন (জবি), সাইমন সৈয়দ (চবি), সাজ্জাদুল হক (ঢাবি), গগন পাল (রাবি), সুব্রত পোদ্দার (ববি)।
জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন মোট ১০২ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে। প্রায় ১০ মাস অপেক্ষার পর ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে আইন মন্ত্রণালয় যে নিয়োগ-গেজেট প্রকাশ করে, সেখানে মাত্র ৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বাকি ১৩ জনের নাম কোনো কারণ উল্লেখ না করেই বাদ দেওয়া হয়। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদ পড়া প্রার্থীরা।
প্রার্থীরা জানান, তাদের কারও বিরুদ্ধেই কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক বা ফৌজদারি মামলা নেই; তারা সম্পূর্ণরূপে মেধা, যোগ্যতা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বিচারক হওয়ার সুপারিশ লাভ করেছেন। জুলাই অভ্যুদয়-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দা রিপোর্টের নামে মেধাবীদের বঞ্চিত করা ছাত্র জনতার ত্যাগের সঙ্গে বেইমানি। একই ধরনের রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও যেখানে ৮৮ জনকে গেজেট দেওয়া হয়েছে, সেখানে বাকি প্রার্থীদের ওপর ‘রি-ভেরিফিকেশন’ চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বৈষম্যমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেনাজ হুমায়রা বলেন, আমি প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সাবমিট করেছি। আমার ও পরিবারের রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার বাবা মেহেরপুর জজ আদালতের আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। সকলেই আমাদের সম্পর্কে জানেন। আমি ইবির খালেদা জিয়া হলে ছিলাম। মেয়েদের রাজনীতি করার পরিবেশ ছিলো না। কিন্তু আমাকে কেন গেজেটভুক্ত করা হয়নি তা এখনো স্পষ্ট নই। তবে বাকি ১২ জনের সাথে কথা বলেছি। এতে বুঝলাম ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, বরং আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অন্যায়। যা সংবিধান, ন্যায়সংগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সুশাসন পরিপন্থী।
তিনি বলেন, আমাদের দূর-আত্মীয় কেউ রাজনীতি করলেও তার দায় কেন আমাদের উপর বর্তাবে? মোট ১০২ জনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়া বা মানদণ্ডে মাত্র ৮৮ জনকে গেজেট দেওয়া হলো এবং বাকি ১৩ জনকে কেন বাদ দেওয়া হলো, এর স্বচ্ছ, নথিভুক্ত ও নির্ভুল ব্যাখ্যা আইন মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দিতে হবে।
ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও সমান আচরণের দাবিতে সম্মিলিতভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা এবং সচিবের কাছে দ্রুত ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
আইন বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী তানিম তানভীর বলেন, বিচার বিভাগের মতো সংবেদনশীল ও স্বচ্ছতা-নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থায় এমন বিভাজন ও অঘোষিত বর্জন প্রশাসনিক পদ্ধতির ন্যায়পরায়ণতা প্রশ্নবিদ্ধ। অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে। যে প্রক্রিয়ায় ৮৮ জনকে গেজেট প্রদান করা হয়েছে, একই মানদণ্ডে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর মঞ্জুরুল হোসেন বলেন, আমাদের অনেক অফিসারের পদোন্নতি হয়েছে। আমাদের নিচের টায়ারে অনেক অফিসার প্রয়োজন। এজন্য সিদ্ধান্ত হলো যতগুলো রিপোর্ট এসেছে অলরেডি ততগুলো ছেড়ে দেওয়া। মূলত এটা টোটালটা কমপ্লিট করতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত লেগে যেত। বাকিরা প্রয়োজনে আবার ১৫/৩০ দিনের মধ্যে জয়েন করবে কিন্তু সিনিওরিটি কারো নষ্ট হবে না। যে কয়জনের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি এটা নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের উচিত একটা প্রেস নোট দেওয়া আমি এটি রবিবার সংশ্লিষ্টদের অবগত করবো।
