বুধবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৬ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:০৪ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার নারায়ণপুর গ্রামের অনুপূর্ণা রায় আইটি চাকরি ছেড়ে বেছে নেন সিনেমার পথ। গ্রামের রক্ষণশীল পরিবেশ এবং পরিবারের উদ্বেগের মাঝেও তিনি আঁকড়ে ধরলেন ক্যামেরা ও গল্পের হাত। সেই সাহসিকতা আজ তাঁকে ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে নিয়ে গেছে।
প্রথমবার নিজের পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সংস অব ফরগটেন ট্রিজ’-এর জন্য তিনি অরিজ্জন্তি বিভাগে সেরা পরিচালক হিসেবে পুরস্কার জিতলেন—এ বিভাগে এটাই প্রথম ভারতীয় অর্জন।
সিনেমার মূল কাহিনি মুম্বাইয়ের দুই নারী, থুয়া (নাজ শেখ) ও স্বেতা (সুমি বাঘেল)-এর জীবনের মিলন ও নিঃসঙ্গতার গল্প। থুয়া সংসার চালাতে যৌনকর্মীর কাজও করেন, আর স্বেতা কল সেন্টারে চাকরি করেন, জীবনের সঙ্গী খুঁজছেন। শহরের ভিড়ে দুজনই একে অপরের কাছ থেকে খুঁজে পান আশ্রয়।
ভেনিসে পুরস্কার জয়ের পর অনুপূর্ণা বলেন, “এই সম্মান সমস্ত নারীর জন্য। যাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, যাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে—এ পুরস্কার তাদেরও কণ্ঠকে শক্তি দেবে।” তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলারও নিন্দা জানান।
২০২২ পর্যন্ত অনুপূর্ণা আইটি চাকরিজীবী ছিলেন। মুম্বাইয়ের ভাড়া ফ্ল্যাটেই চিত্রনাট্য লিখে তিন মাস ধরে অভিনেতাদের সঙ্গে শুটিং করেন। তিনি বলেন, “সিনেমা বানানো নয়, আমরা স্মৃতি তৈরি করেছি। রান্না করেছি, শুটিং করেছি, চিৎকার করেছি—সেই স্মৃতি আজ বিশ্বমঞ্চে আলোকিত।”
অনুপূর্ণা জানালেন, এই অর্জন ব্যক্তিগতভাবে আনন্দের হলেও দায়িত্ব বাড়িয়েছে। তিনি আরও জরুরি গল্প বলতে চান, আরও ভালো হতে চান। ভারতীয় নারী নির্মাতাদের প্রেরণা হিসেবে পায়েল কাপাডিয়া, কিরণ রাও, জোয়া আখতার, রীমা দাশ ও মীরা নায়ারের নাম উল্লেখ করেন।
সমালোচকরা সিনেমার সংলাপ কিছুটা আরোপিত মনে করলেও প্রধান অভিনেতাদের অভিনয়কে প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে ভূষণ শিম্পির চরিত্রে নারীদের ওপর চলমান নিপীড়নের চিত্র বাস্তব ও ভয়ানকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
পুরুলিয়ার নারায়ণপুর গ্রামের মানুষ নিশ্চয়ই গর্বিত। অনুপূর্ণা জানালেন, “শেষবার গ্রামে গিয়েছিলাম ১০ বছর আগে। এবার ফিরব অন্য রকম জয় নিয়ে।”
বিজ্ঞাপন