শনিবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭ ১৫ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) খেলায় রাতভর উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স বাজানোর প্রতিবাদে ফেসবুক পোস্টের জেরে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ব্যবসায় প্রশাসন ভবন ও রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের মাঝের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান।
জানা যায়, গতকাল সাদ্দাম হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি’র সামনে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী সাউন্ডবক্সে উচ্চ শব্দে গান বাজাতে থাকে। পরে একই হলের সামনে কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠে রাতভর উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে ক্রিকেট খেলে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান ভোররাতের দিকে উচ্চ শব্দ করে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের গালি দিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। ফজরের নামাজের সময় হল থেকে বের হলে মাহফুজের সঙ্গে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বাকবিতন্ডা হয়। পরে ক্রিকেট খেলোয়াড়রা তাকে ফেসবুক পোস্টটি ডিলিট করার অনুরোধ করলে ভুক্তভোগী মাহফুজ সকালে পোস্টটি ডিলিট করেন। পরে বিকেলে মাগরিবের নামাজের আগে মাহফুজকে একা পেয়ে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অন্তত ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী এলোপাতাড়ি মারধর করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এতে তিনি মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের আদিব রহমান, ওলি আহমেদ, রাহাত আহমেদ, কাউসার আহমেদ, ২০২১-২২ বর্ষের খলিলুর রহমান এবং ২০১৯-২০ বর্ষের সিয়াম সহ বেশ কয়েকজন।
অভিযুক্ত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওলি আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না৷’
অভিযুক্ত ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিব বলেন, ঐ ঘটনায় আমি উপস্থিতই ছিলাম না। আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ছিলাম।
আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজেই অসুস্থ। আমি কিভাবে মারধর করবো। আমরা ৭/৮ জন ছিলাম তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তার ওই পোস্টটি গঠনমূলক সমালোচনার উপায়ে দিতে বলছিলাম। সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি৷’
এসময় ভুক্তভোগী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল রাতে উচ্চ শব্দের কারণে আমরা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা পড়তে পারিনি। আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সাড়ে এগারোটার দিকে আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিই। ওই পোস্টটা দিয়ে আমি ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করি, পড়তে পারিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি ঘুমাতে পারি না। সারারাত ঘুম না আসার পরে যখন ফজরের আযান শুরু হয় তখন আমি একটা পোস্ট দিই। পোস্টটা এরকম ছিল যে, “কিছু শুয়োরের বাচ্চার জন্য রাতে ৩০ মিনিটও ঘুমাতে পারলাম না”। পরে ভোররাতে তারা আমাকে ডেকে হুমকি-ধমকি দেয়। বিকেলে সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে নামাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় আমাকে একা পেয়ে তারা আমাকে মারধর করে। ওখানে তারা সবমিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো ছিলো।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ জাকিয়া আকতার বলেন, ‘তার মাথায় ও কাঁধে ফুলে গেছে, গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ইনজেকশন দিয়েছি।’
হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুস সবুর বলেন, ‘তাদের খেলার আয়োজনের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আগামীকাল ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টি দেখবো। তাছাড়া আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমাকে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’
ক্যাম্পাসে উচ্চ শব্দ বন্ধের বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব’।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ঘটনা শুনেছি। ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। আগামীকাল লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
