কিডনি প্রতিস্থাপনের পরও ওয়ার্ল্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট গেমসে সোনা জিতলেন! ফাতিমা

কিডনি প্রতিস্থাপনের পরও ওয়ার্ল্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট গেমসে সোনা জিতলেন! ফাতিমা

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৯ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুবাইপ্রবাসী বাংলাদেশি কিডনিগ্রহীতা ফাতিমা রশীদ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট গেমসে জ্যাভলিন ছুড়ে সোনা ও ২০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। এই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে অংশ নেন অঙ্গদান বা গ্রহণ করা মানুষরা, যারা জীবনকে উদযাপন করছেন ক্রীড়ার মাধ্যমে। ফাতিমা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার গল্প দিয়ে দেখিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন মানেই জীবন শেষ নয়, বরং স্বপ্ন পূরণের পথ খোলা থাকে।

ফাতিমা রশীদের বয়স তখন মাত্র ২৯, হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। স্বাভাবিক জীবনযাপন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও কিডনির সমস্যার শুরু। কয়েক বছর পর চিকিৎসক জানালেন, তাঁর কিডনি ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে গেছে। এই সময় তিনি গর্ভবতীও ছিলেন। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও শর্করার কারণে কিডনি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ছোটবেলায় কিডনিতে থাকা ক্ষুদ্র পাথরও সমস্যাকে ত্বরান্বিত করেছিল।

২০১৪ সালে ফাতিমা প্রিম্যাচিউর সন্তান প্রসব করেন, স্বামী ও শাশুড়ির ভিন্ন দেশে অবস্থানের কারণে তিনি স্পেনে গিয়েছিলেন। সন্তান জন্মের পর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়, কিডনির কার্যকারিতা কমে মাত্র ৪৫ পয়েন্টে নেমে আসে।

দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার মধ্যেও ফাতিমা মানসিকভাবে দুর্বল হননি। কিডনি রোগ নিয়েও মানুষ ভালো থাকতে পারে—এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে তিনি সচেতনতা শুরু করেন। ২০২২ সালে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে তাঁর কিডনিতে অ্যাকিউট ইনজুরি হয় এবং চিকিৎসক জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র সমাধান।

দুবাইয়ের একটি প্ল্যাটফর্মে নাম তালিকাভুক্ত করার পর পরিবারের সদস্যরাও সাহায্যের চেষ্টা করেন। ভাই, বোন ও মায়ের কিডনি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় অবশেষে ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি এক অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির কিডনি ফাতিমার শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়।

এক মাসের মধ্যে ফাতিমা দৌড়ে সাড়ে চার কিলোমিটার সম্পন্ন করেন—নতুন জীবনের উদযাপন। ২০২৫ সালে জার্মানির ড্রেসডেনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট গেমসে তিনটি ক্রীড়া বিভাগে অংশ নিয়ে দুটিতে পদক জিতেছেন। সোনার পদক জয়ের পর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে তুলে দিয়ে নিজের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা দেখান।

ফাতিমা বলেন, "কিডনি প্রতিস্থাপন মানেই জীবন শেষ নয়। নিজের স্বপ্নের পথে হাঁটা যায়, স্বপ্ন পূরণ করা যায়। যে যার স্বপ্ন, সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত।"

ঢাকায় জন্ম নেওয়া ফাতিমা, যিনি ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে ওমান ও পরে বিভিন্ন দেশে বসবাস করেছেন, এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গুগল মিটে তাঁর গল্প শেয়ার করছেন। নতুন জীবন ও ক্রীড়া সাফল্যের মাধ্যমে ফাতিমা রশীদ প্রমাণ করলেন, স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সম্ভাবনা ও স্বপ্ন জারি রাখা যায়।

বিজ্ঞাপন