সোমবার , ০২ জুন, ২০২৫ | ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৪:২০ ১ জুন ২০২৫
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আগামী তিন মাস পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান। তিনি জানান, এই সময়ে ইকো ট্যুরিজম, মাছ ও কাঁকড়া শিকার, মধু আহরণসহ সব ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছর এই সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার হাজারো জেলে, বোটচালক এবং মৌয়ালসহ অন্যান্য বনজীবী পরিবার।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, “সুন্দরবন আমাদের পেটের ভাত, ওটা বন্ধ মানে আমাদের রান্নাঘর বন্ধ। তিন মাস বসে থাকলে কীভাবে সংসার চলবে?” তিনি অভিযোগ করেন, সরকার যে চাল বরাদ্দ দেয়, তা সবার ভাগে পড়ে না। প্রকৃত জেলেরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকলেও যাঁরা বনেই যান না, তারাই বরং চালের কার্ড পাচ্ছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৩,৯২৮ জন। কিন্তু সহায়তা পাচ্ছেন মাত্র ৮,৩২৪ জন। বরাদ্দকৃত সহায়তা হিসেবে তিন মাসে দুই কিস্তিতে মোট ৭৭ কেজি চাল সরবরাহ করা হবে তাদের মধ্যে।
স্থানীয় জেলে জলিল গাজী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সময় কাঁকড়া ডিম দেয় না, তাহলে নিষেধাজ্ঞা কেন? ফরেস্টারদের খেয়ালখুশিমতো বন্ধ করা হয়। অনেক প্রভাবশালী একাধিক বোট লাইসেন্স নিয়ে ভাড়া দেন, অথচ আমরা যাই সত্যিকারে বনজীবী, তারাই বঞ্চিত।”
গাবুরা ইউনিয়নের মৌয়াল গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমার পরিবার পুরোপুরি বন নির্ভর। মধু সংগ্রহ না করতে পারলে আয় বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা থাকলে অন্তত এই সময়টা বাঁচতে পারতাম।”
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, “জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে বনে প্রবেশের পাস প্রদান বন্ধ করা হয়েছে এবং বনে অবস্থানরতদের ৩১ মের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে স্থানীয়দের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রকৃত বনজীবীদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা না হলে বন রক্ষার এই উদ্যোগই হয়ে উঠবে তাদের জীবনে চরম দুর্ভোগের কারণ।
বিজ্ঞাপন