রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:১০ ২৫ মে ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা একবার গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করানোর জন্য তার পা ধরেছিলেন। এই ঘটনা ঘটে ৫ আগস্ট, দেশের একটি রাজনৈতিক সংকটময় সময়ে। এই তথ্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সামনে একটি লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি ওই প্রতিবেদনের একটি অংশ পড়ে শুনিয়ে বলেন, “তদন্তের এক পর্যায়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেখ রেহানা একবার গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের অনুরোধ করেন এবং আবেগপ্রবণ হয়ে তার পা ধরে ফেলেন।”
তবে প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, এই ঘটনা কোন সালে ঘটেছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি সম্ভবত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ের ঘটনা হতে পারে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছিল। ওই সময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটরের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা বা শেখ রেহানার দিক থেকেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।
বিরোধী দলের নেতারা এই বক্তব্যকে আওয়ামী লীগের ভিতরের অন্তঃকলহের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এমন তথ্য প্রকাশ থেকে প্রমাণিত হয়, শাসনকালীন সময়েও নেতৃত্ব নিয়ে দলে মতবিরোধ ছিল। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।
আইনজীবী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য যদি যথাযথ প্রমাণসহ হয়, তবে এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। একজন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেন, “আদালতে পেশ করা প্রতিবেদনের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব এখন আদালতের। তবে এটি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের দ্বার উন্মোচন করেছে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ২০১০ সালে, যুদ্ধাপরাধের বিচার পরিচালনার জন্য। এর মাধ্যমে একাধিক জামায়াত ও বিএনপি নেতার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই বিচারকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা এবং সংঘাত আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে পরিবারের মধ্যেই যদি এমন আলোচনা বা অনুরোধ হয়ে থাকে, তবে তা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো চলমান এবং ভবিষ্যতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে। ফলে এই প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য ভবিষ্যতের রাজনীতি ও ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিজ্ঞাপন