এক বছরে বন্ধ ৩৫৩ কারখানা, বেকার ১ লাখ ১৯ হাজার—শিল্পখাতে গভীর সংকেত

এক বছরে বন্ধ ৩৫৩ কারখানা, বেকার ১ লাখ ১৯ হাজার—শিল্পখাতে গভীর সংকেত

মোরনিউজ ডেস্ক
মোরনিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:৪০ ১৩ আগস্ট ২০২৫

দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চল সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে গত এক বছরে মোট ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে অনেকে নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত গ্রামে ফিরে গেছেন। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের বড় অংশই তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল খাতের। কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিকরা নানা সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

শিল্পমালিকদের মতে, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার ও সুদনীতি কড়াকড়ি, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি জটিলতা, অব্যাহত গ্যাস সংকট ও দফায় দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব, শ্রমিক অসন্তোষ এবং ধারাবাহিকভাবে মজুরি বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ‘শাটডাউন’-এর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

চাকরি হারানো শ্রমিকদের বড় একটি অংশ সঞ্চয় খরচ করে নতুন কাজের খোঁজে শহরে থেকে গেছেন, তবে অনেকে ভাড়া ও নিত্যপণ্যের মূল্য মেটাতে না পেরে গ্রামে ফিরে গেছেন। এতে অনেকের সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় কমিয়ে দিতে হচ্ছে এবং দেনার ফাঁদে পড়ার ঘটনাও ঘটছে।

সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল খাতে। সুতা, কেমিক্যাল, রংসহ কাঁচামালের আমদানিতে এলসি জটিলতা, গ্যাস ও বিদ্যুতের অনিশ্চয়তা, মেশিন ডাউনটাইম বৃদ্ধি এবং অর্ডার কমার কারণে এই খাতগুলোতে সংকট প্রকট। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্প খাত বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল রিফাইন্যান্স, এলসি সহজীকরণ, শিল্পাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং চাকরি হারানো শ্রমিকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি আয়ের সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া জরুরি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে নগরাঞ্চলে বেকারত্ব আরও বাড়বে, ভোক্তা ব্যয় কমে যাবে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়তে পারে এবং রপ্তানি আয় হ্রাস পাবে। তাই দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন