ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন করছে যুক্তরাজ্য

ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন করছে যুক্তরাজ্য

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৪:২৮ ২৭ জুলাই ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর ধূমপান বিরোধী আইন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। নতুন প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কেউই সারা জীবনে আর তামাকজাত পণ্য কিনতে পারবে না। এভাবে ধাপে ধাপে কার্যকর করে পুরোপুরি তামাক বিক্রি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার। লক্ষ্য একটাই—একটি সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তোলা।

ধূমপানের ক্ষতিকর পরিণতির বাস্তব উদাহরণ গ্যারি নামের একজন ভুক্তভোগী। কিশোর বয়সে ধূমপান শুরু করা গ্যারি এখন মাত্র ৪০ বছর বয়সেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে বাইপাস সার্জারির অপেক্ষায় আছেন। চোখের দৃষ্টিশক্তিও আংশিক হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। গ্যারি বলেন, “একসময় ভাবতাম কিছু হবে না, কিন্তু এখন বুঝি, আমি ভুল ছিলাম। এটা আসলেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।”

এই ধরনের জীবনবিনাশী পরিস্থিতি ঠেকাতেই যুক্তরাজ্য সরকার আইনটি আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ধূমপানযোগ্য বয়স ১৮ হলেও, প্রতি বছর এই সীমা এক বছর করে বাড়ানো হবে। এর মানে, ২০২৭ সালের পর থেকে নতুন করে আর কেউ তামাক কেনার আইনি অনুমতি পাবে না। সরকারের ধারণা, ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের হার আগামী এক দশকে শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

লন্ডনের একটি যুবক্লাবের ১৪ বছর বয়সী সদস্য আলফ্রেড বলেন, “আমি জানি আমি কোনোদিন তামাক কিনতে পারবো না, তবু আমি এই আইনকে সমর্থন করি। আমার মা ও ভাই ধূমপানের কারণে কাশি দিয়ে কষ্ট পায়। আমি কখনো ধূমপান করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি।”

যদিও তরুণদের মধ্যে ধূমপানের হার কমছে, তবে ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আলফ্রেড মনে করেন, এর পেছনে রয়েছে আকর্ষণীয় ফ্লেভার ও বাজারজাতকরণের কৌশল। “সিগারেট সবসময় একই রকম, কিন্তু ভ্যাপে অনেক স্বাদ। তাই কৌতূহল থেকেই অনেকে চেষ্টা করে,” বলেন তিনি।

এই প্রবণতা রুখতে সরকার ভ্যাপিং পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারও সীমিত করার পরিকল্পনা করছে। লক্ষ্য একটাই—ধূমপান ও ভ্যাপিং-সম্পর্কিত সবকিছু থেকে তরুণ প্রজন্মকে দূরে রাখা।

অন্যদিকে, অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা গ্যারি এখন ধূমপান মুক্ত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একটি সফল সিগারেট ছাড়ার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার আশা করছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে গ্যারি বলেন, “নিজের জীবন কেন নষ্ট করবে? যদি ধূমপান সহজলভ্য না হতো, হয়তো আমি আজ সুস্থ থাকতাম।”

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত আইনটি ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের হাউজ অফ কমন্সে পাস হয়েছে এবং বর্তমানে তা হাউজ অফ লর্ডসে বিবেচনাধীন। আইনটি চূড়ান্তভাবে পাস হলে, ২০২৭ সাল থেকেই যুক্তরাজ্য বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্বদাতা দেশ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন