রবিবার , ১৮ মে, ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:৪৬ ১৭ মে ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী নেতার তারেক রহমান শনিবার রাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা না বাড়িয়ে এখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা প্রয়োজন। এতে দেশের জনগণ নিরাপত্তাবোধ পাবে এবং গণতান্ত্রিক শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
তারেক রহমান বলেন, “আমার অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আবেদন, অবিলম্বে এমন সময় নির্ধারণ করুন, যখন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। দেশের চলমান পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে করার দরকার নেই। জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া পতিত, পলাতক স্বৈরাচারকে প্রতিহত করা কঠিন।”
তিনি আরো বলেন, “লোকসানের আশায় অথবা লোভ-লাভের প্রলোভনে আটকে না থেকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা উচিৎ। অন্তর্বতীকালীন সরকার যেন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে।”
তারেকের ভাষ্যে, “বিএনপি সহ দেশের সব রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার থেকে তা সেভাবে সাড়া পায়নি। বরং তারা জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা বিষয়ে নানারকম অল্প-বেশি সংস্কারের অভিনব শর্ত চাপিয়ে বিষয়টিকে পিছিয়ে দিচ্ছে।”
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এ কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিন রাজপথে নামছে। মাত্র দশ মাসে সরকারের ভেতরে ও বাইরে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।”
তারেক বলেন, “সরকার যদি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। এর ফলে দেশের পরিস্থিতি আরও জটিল ও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে, যা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।”
তিনি অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি সর্তকবার্তাও দেন, “তাদের ক্ষমতা ও দক্ষতার প্রতি সচেতন হওয়া দরকার। নতুবা দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।”
এর আগে, গুলশানের লেকশোরে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)-এর অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারেক এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাত স্বাগত বক্তব্য দেন।
তারেক আরো বলেন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। যদিও বিভিন্ন সমালোচনা রয়েছে, গণতান্ত্রিক বিশ্বের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণের সঙ্গে থেকে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এটি গণতান্ত্রিক বিশ্বের অক্ষর।”
তারেক বলেন, “সরকার কোনো একটি এলিট ক্লাব বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করলে বিরাজনীতিকরণ উৎসাহিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত দেশের ক্ষতির কারণ হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং গণতন্ত্রকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এনডিএম যে ২২ দফা সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে আমি ৯ দফা দেখেছি এবং সেগুলো সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে যেন তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
তারেক বলেন, “রাজনৈতিক দল ও সরকার পরিচালনায় আদর্শ, উদ্দেশ্য ও প্রস্তাবনার পক্ষে জনগণের সমর্থন অপরিহার্য। জনগণের ম্যান্ডেট পেলে তারা রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বিধি-বিধান শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংগঠিত করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, কূটনীতিক, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাসহ এনডিএমের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন