বাংলাদেশ নির্বাচন ভারতের জন্য কঠিন পরীক্ষা

বাংলাদেশ নির্বাচন ভারতের জন্য কঠিন পরীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ১০:২৪ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভারতের অবস্থান নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক জটিল সমীকরণ। কারণ, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে তৈরি হয়েছে কঠিন অঙ্ক।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে এ সরকারের সম্পর্ক শীতল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য নিয়েও কড়াকড়ি আরোপ করেছে ভারত।

অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। আবার জামায়াত ও ভারতের সম্পর্ক বরাবরই দূরত্বপূর্ণ। ইউনূসের প্রশাসনের প্রতিও ভারত খুব আস্থাশীল নয়। ফলে ভারতের জন্য এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা স্পষ্টতই অপেক্ষা করছে—গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তবেই তারা আলোচনায় আগ্রহী হবে।

গত ২০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনে “অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ” প্রত্যাশা করে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারত আসলে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিলে ভারতের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দল বিএনপি। জামায়াত বা এনসিপির ওপর ভারত আস্থা রাখছে না। প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরীও মনে করেন, ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন জরুরি।

অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সাবেক সাংসদ জহর সরকারের মতে, বিএনপি-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো দল এবং তাদের পক্ষে নির্বাচনে সুবিধা পাওয়া সম্ভব। তবে তিনি মনে করেন, শেষ পর্যন্ত ভারতের চাওয়া নয়, বরং বাংলাদেশের জনগণ যাদের নির্বাচিত করবে, ভারতকে তাদের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, জামায়াত সমর্থিত ছাত্রশিবির সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে ভালো ফল করেছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারাও জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে নামতে প্রস্তুত। এ অবস্থায় ভারতের সামনে সমীকরণ আরও জটিল। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, জামায়াত, মুহাম্মদ ইউনূস ও এনসিপি—সবাইকে ঘিরে ভারতের কঠিন অঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন ভারতের কাছে শুধু প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং সরাসরি কূটনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের বিষয়। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি, বিএনপি-র সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, জামায়াত ও এনসিপির অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে ভারতের সামনে তৈরি হয়েছে কঠিন অঙ্ক। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক না কেন, ভারতকে সেই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে।

বিজ্ঞাপন