বৃহস্পতিবার , ০৫ জুন, ২০২৫ | ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:৫৪ ৩ জুন ২০২৫
শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রায় চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (তৎকালীন এমএনএ ও এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নতুন এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তাদের আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলা যাবে না, বরং তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পরিচিত হবেন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কর্মী, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা পেশাজীবী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দূতাবাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে তাদেরকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২ অনুযায়ী এদের সবাইকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হবেন, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে নাম নিবন্ধন করেছেন এবং সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সেই সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়েছেন। এর পাশাপাশি নারী নির্যাতনের শিকার ‘বীরাঙ্গনা’ ও ফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স এবং চিকিৎসা সহকারীরাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
নতুন সংজ্ঞায় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বলতে বোঝানো হয়েছে: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত সশস্ত্র সংগ্রাম।
এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে এটি দ্বিতীয়বার সংশোধনের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত করা হয়।
বিজ্ঞাপন