শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, সরাসরি সম্প্রচারের সম্ভাবনা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, সরাসরি সম্প্রচারের সম্ভাবনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৬ ৩১ মে ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আগামীকাল ১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন বিভাগ। জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন এবং নিপীড়নের ঘটনায় এই অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি জানান, “এই মামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের কাছে থাকা প্রমাণ, সাক্ষ্য ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করে ৮টি নির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে।”

প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে গণহত্যার ৪টি বড় ঘটনা, বিচারবহির্ভূত হত্যার ৩টি ঘটনা এবং একটি নারী নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ। প্রায় ৫০ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর জবানবন্দি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি এই অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দলিল ও কিছু অডিও ক্লিপকেও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে।

গাজী তামিম আরও জানিয়েছেন, জনগণের জানার অধিকার এবং বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ মামলার বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমতি মিললে আগামীকাল থেকেই বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে সম্প্রচার শুরু হবে। এমনকি বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও বিচার পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ব্যাপক দমনপীড়নের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, এই সময় প্রায় ৩০০ জন নিহত হন এবং কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ বা আটক হন। এইসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে’ মর্মে প্রাথমিক তদন্ত করে মামলাটি গঠন করে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, “বর্তমান সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে এই প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছে। কোনো বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য বা প্রমাণ ছাড়াই এই মামলা সাজানো হয়েছে।” তবে প্রসিকিউশনের দাবি, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সংগৃহীত প্রমাণ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব অভিযোগ গঠিত হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যদি আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থাও মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এভাবে একটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হচ্ছেন—এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। আগামীকাল এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তা শুধু দেশের রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন