গ্যাস সংকটে অচল দেশ: থমকে শিল্প উৎপাদন, রান্নাঘরে নিভু নিভু চুলা

গ্যাস সংকটে অচল দেশ: থমকে শিল্প উৎপাদন, রান্নাঘরে নিভু নিভু চুলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৮:৪৯ ২৯ এপ্রিল ২০২৫

দেশজুড়ে তীব্র গ্যাস সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। রান্নাঘরে চুলা জ্বলছে না, আর শিল্পাঞ্চলে থেমে যাচ্ছে উৎপাদনের চাকা। গ্যাস সংকট এতটাই প্রকট যে, সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়িচালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে জ্বালানির জন্য। এতে করে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাও পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে।

শিল্পাঞ্চলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় সিরামিক, ইস্পাত এবং টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। শিল্প মালিকরা জানাচ্ছেন, সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েও নিরবিচারে গ্যাস মিলছে না। এ অবস্থায় উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, অনেকে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে কমছে শিল্প বিনিয়োগ, হুমকির মুখে রপ্তানি আয়ও।

পেট্রোবাংলার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিদ্যুৎ খাতেই সবচেয়ে বেশি গ্যাস দেওয়া হচ্ছে—৩৯২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট (৪৩ শতাংশ)। বিপরীতে শিল্পখাত পাচ্ছে মাত্র ১৬৮ দশমিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট (১৮ শতাংশ)। আবাসিক গ্রাহকের ভাগেও পড়ছে মাত্র ১১ শতাংশ।

গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও রূপগঞ্জের শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ নেমে এসেছে স্বাভাবিক মাত্রার এক-তৃতীয়াংশে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সালেউদ জামান খান জানান, তার কারখানায় যেখানে গ্যাসচাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই, সেখানে তা নেমে এসেছে ২ পিএসআই-এ। এতে করে ডিজেলে উৎপাদন চালাতে গিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে, কিন্তু সক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিনের রান্নার কাজ নিয়েও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। কলাবাগান এলাকার নাজনীন আহমেদ বলেন, “দিনের বেলা গ্যাস থাকে না বললেই চলে, রাত ২টা-৩টার দিকে সামান্য চাপ আসে। এতে করে রাত জেগে রান্না করতে হচ্ছে।” মোহাম্মদপুরের শামীমা আক্তার বলেন, “গ্যাসের বিল ঠিকমতো দিচ্ছি, অথচ গ্যাস পাই না দিনেও না রাতেও।”

সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। মিরপুর সিরামিক ওয়ার্কস এলাকায় সিএনজি নিতে গাড়ির দীর্ঘ সারি প্রতিদিনের চিত্র। এক চালক বলেন, “ভোরে গ্যাস নিতে এসে দুপুর গড়িয়ে যায়—তবুও নিশ্চিত না যে পাওয়া যাবে।”

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৯৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি রয়েছে ৪৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে পুরোনো কূপ সংস্কার ও নতুন কূপ খননের কাজ চলছে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।

তবে আশার কথা, মে মাসের মাঝামাঝি ও জুনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় উৎস থেকে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এলএনজি থেকে ৬০–৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাড়তে পারে। জুনের শুরুতে আরও ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট যোগ হলে সংকট কিছুটা সহনীয় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন