রবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ছবি: সংগৃহীত
প্রকাশিত: ০৫:০১ ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী এবং জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের এমপি মির্জা আজম চীন সফর শেষে বিশাল নকশিপল্লী প্রকল্পের পরিকল্পনা নেন। দেশের চাহিদা বিবেচনা না করেই ৩৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি। যদিও পরিকল্পনামন্ত্রীসহ অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন, তবু প্রকল্পের নাম শেখ হাসিনার নামে রেখে সকল আপত্তি এড়িয়ে যান তিনি।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও পাঁচ বছরেও কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের অভাব ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করেছে। ৩০০ একর ফসলি জমি নষ্টের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাঁত বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এত বড় প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানও মনে করেন, বিগত সরকারের আমলে এমন অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যেগুলো অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কৃষক মফিজ (৪৪) বলেন, ‘আমার জমি নিয়ে নিলে আমি বেকার হয়ে যাব। বছরে তিনটি ফসল হয় এখানে।’ আরেক কৃষক আলাউদ্দিন (৫০) বলেন, ‘আমার ৫২ শতাংশ জমি রয়েছে, যেখানে তিনটি ফসল হয় এবং বছরে এক লাখ টাকা আয় হয়। জমি গেলে আমরা কী করব?’
এদিকে, প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে ‘জামালপুর নকশিপল্লী’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খরচ কমিয়ে ২০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ৫০০ উদ্যোক্তার জন্য নতুন করে প্রকল্পের পরিধি নির্ধারণ করা হবে। তাঁত বোর্ডের প্রধান (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মো. আইয়ুব আলী জানান, ১০০ একর জায়গায় সীমিত বাজেটে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে।
তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ জানান, প্রকল্পটি ছোট আকারে বাস্তবায়ন বা বাতিলের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টার সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যদি কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত না হয়, তবে সরকারের অর্থনৈতিক টেকসইতা এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় তা বাতিল করা হবে।’
বিজ্ঞাপন