বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৯ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৬ ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। তবে বর্তমান ঋতুটির আগমন ঘটে ভ্যাপসা গরমের মধ্য দিয়ে। ভাদ্র-আশ্বিন মাস মানেই গরমকাল। ভাদ্রের সেই গরমে আমরা যখন ছটফট করি তখন গরমের সঙ্গে একটি ফলের নাম এসে যায়। আর সেই ফলটি হলো তাল। গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে বলে ফেলি - এ যেন তালপাকা গরম।
আর সেই কারনেই সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসে গাছে তাল ধরে। ভাদ্র মাসের শেষ দিকে এবং আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে তাল পাকা শুরু হয়। ভাদ্রে গাছ থেকে পাকা তাল পড়ার দৃশ্যটাই মনে হয় এমন - আকাশ ভেঙে কী পড়ল যেন। তাল পড়ার শব্দ শুনে সঙ্গে সঙ্গে তা কুড়ানোর জন্য দৌড়ে ছুটে যায় অনেকে। আসলে তাল পড়ার দৃশ্য ও তার শব্দ মনে রাখার মতো।
এমন দৃশ্য দেখা যায় যশোরের শার্শা উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের (বড়নিজামপুর) গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে, যেন এক তাল কুড়ে পাওয়ার আশায় বসে থাকে অনেকে।
তালের উপরের শক্ত খোলস ফেলে দিলে ভেতরে রসালো আঁশযুক্ত তালের বিচি পাওয়া যায়। এই বিচিগুলোকে তালের রস আহরণকারী যন্ত্রের উপর ঘষে আঁশ থেকে রস আলাদা করা হয়। আর এই রস আলাদা করার সময় এক বাড়ির তালের ঘ্রাণ আশেপাশের বাড়িতে চলে যায়। পাকা তালের গন্ধ খুব আকর্ষণীয়। পাকা তাল থেকে এ রস জ্বাল দিলে বেশ ঘন হয়। এই জ্বাল দেওয়া ঘন রস দিয়ে মুড়ি খাওয়ার স্বাদের জুড়ি নেই।
গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে বছরব্যাপী যে পিঠা বানানোর সংস্কৃতি চালু রয়েছে, তার মধ্যে ভাদ্র মাসে তালের পিঠা বানানো একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। তালপাকা এই গরমে চালের গুঁড়া বা ময়দার সঙ্গে তালের রস মিসিয়ে তার সঙ্গে গুড় বা চিনি দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। এসব পিঠার মধ্যে রয়েছে তালের বড়া, তেলের পিঠা, পাটিসাপটা, মালপোয়া, কুলি পিঠা, রুটি অথবা পরোটার মতো পিঠা। পাকা তালের রস দিয়ে এসব পিঠা গ্রামবাংলায় মেয়ের জামাই আপ্যায়নে জুড়ি নেই। পল্লিবধূরা নানা নকশায় বিভিন্ন আকৃতিতে এ পিঠা তৈরি করেন। এসব পিঠা কারো কারো কাছে গরম গরম খেতে ভালো লাগে, আবার কেউ কেউ পরদিন সকালে খেতে বেশি পছন্দ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পুজো-পার্বণেও এ পিঠা তৈরি হয়। আশ্বিনের পুজোয় ও শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে নানা ধরনের তালের পিঠা তৈরি হয়ে থাকে। তালের পিঠা গ্রামের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের প্রিয়। এ পিঠার সঙ্গে আমাদের আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে।
উপজেলা চালতা বাড়িয়া বাজারের তাল বিক্রেতা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল বর্মণ জানান, আমি উপজেলার বাগআচড়া, গোগা, কায়বা,উলশী,জামতলা সহ পার্শ্ববর্তী ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে পাকা তাল সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করি। এতে দৈনিক ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হয়। গাছ পাকা ছোট তাল ১০ টাকা, মাঝারি তাল ২০ টাকা ও বড় তাল ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আর হয়তো ১০-১৫ দিন হাট-বাজারে তাল বিক্রি করতে পারবো। এরপর তালের মৌসুম শেষ হয়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন