বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:০৩ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পোশাক শিল্পখাত অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি বিশ্বে সর্বনিম্ন বলে দাবি করেছে গণতদন্ত কমিটি।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, প্রশ্ন হলো—মজুরি চাইতে হবে কেন? ইনক্রিমেন্ট চাইতে হবে কেন? দ্রব্যমূল্য তো গোপনে বাড়ে না যে কেউ জানে না। সবাই বাজারের অবস্থা জানে, মজুরি বোর্ডও ভালোই জানে। তবুও মজুরি বকেয়া থাকে, তার যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস হয় না। শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত রিপোর্ট পড়ে শোনান অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক ন্যূনতম মজুরি চাইতে হয়। বিনিময়ে পাওয়া যায় হামলা, মামলা ও গুলি!
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, কম্বোডিয়ার অর্থনীতি আমাদের তুলনায় নাজুক হওয়ার পরও তারা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০ ডলারের বেশি নির্ধারণ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানে তা ১৭০-১৮০ ডলার। চীনে একজন পোশাক শ্রমিক ৩০০ ডলার মজুরি পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৯৫ ডলার। তারপর বছর বছর তা সমন্বয় করার কথা থাকলেও করা হয়নি। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এবারে দাবি করা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা, যা ২০০ ডলারের কাছাকাছি, ন্যূনতম মজুরি।
মালিকপক্ষ সাড়ে বারো হাজার টাকা প্রস্তাব করে, যা ১১০ ডলারের কাছাকাছি বলে রিপোর্ট তুলে ধরা হয়।
শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার দায়িত্ব ছিল সরকার এবং সরকার গঠিত ওয়েজ বোর্ডের। কিন্তু তারা তা না করে শুধু মালিকদের কথাই শুনেছে। পুলিশ, বিজিবি, সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে সেই কম মজুরি শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে একজন ঘুমন্ত শ্রমিকসহ আরও তিনজন শ্রমিককে, জখম হয়েছেন আরও অনেকে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বিচারের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ৮টি সুপারিশ করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনীর শ্রমিকদের ওপর হামলা, গুলি করে হতাহত করে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।
আমরা বরাবর দেখছি শিল্প পুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিক পক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুণ্ন করে এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সেজন্য শিল্পের স্বার্থেই এই বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।
মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়। মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে কার্যকর শ্রম আদালত নেই। যতটুকু আছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব। শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং শ্রমিকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মজুরি আন্দোলনে নিহত শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গত ২২ মার্চ গণতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিসহ অনিবার্য বিভিন্ন কারণে আমাদের কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। এর ফলে পুরো রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনু মোহাম্মদ বলেন, সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅ্যভুত্থানে কমপক্ষে ১০০ জনের অধীন শ্রমিক নিহত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন