শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ | ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:২৫ ২৩ মে ২০২৫
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে বিশ্ববাসী এখনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে তালেবান একটি অপরিহার্য কৌশলগত ও কূটনৈতিক ভূমিকা নিয়েছে। আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের, পাকিস্তান ও ইরানের তৎপরতা এবং আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরের ব্যস্ততা এ অঞ্চলের জটিল রাজনৈতিক ভূখণ্ডকে নতুনভাবে গঠন করছে।
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার তিন শক্তিধর দেশের মধ্যকার সম্পর্কগুলো ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। যদিও তালেবানকে কোনো বড় শক্তি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও তারা আফগানিস্তানের বাস্তব শাসক হিসেবে বিবেচিত, যার সঙ্গে যোগাযোগ ও কূটনীতি চালানো প্রয়োজন।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। নিরাপত্তা ও অঞ্চলের ভারসাম্য রক্ষায় ভারতের লক্ষ্য তালেবানের নিয়ন্ত্রণাধীন আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গঠন ও প্রভাব বিস্তারের। ভারত তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চাইলেও, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সীমিত রেখে কূটনৈতিক ধাপগুলো নিচ্ছে।
পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে একটি গভীর ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক রয়েছে, যা ইতিহাস ও রাজনৈতিক কৌশলের জটিল সমন্বয়ে গঠিত। পাকিস্তান তালেবানের মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং একই সঙ্গে এ অঞ্চলের নিজস্ব নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাকিস্তানের দৃষ্টিতে তালেবান একটি ‘কৌশলগত গোপন হাতিয়ার’ যা তাদের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি ও ভারতের কার্যক্রম সীমিত করতে সাহায্য করে।
ইরানও আফগানিস্তানে তালেবানের ভূমিকায় গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষত, আফগান শরণার্থীদের নিরাপত্তা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং ইসলামিক বিপ্লবের আদর্শের প্রসারে ইরানের কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। ইরান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছে, যদিও তারা তালেবান সরকারের নানান নীতিগত বিষয়ে সমর্থন দেয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরের কর্মকাণ্ড এ বিষয়ে স্পষ্ট সংকেত দেয়। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে সফর করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ব্যস্ত ছিলেন। তার সফরগুলো তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, যদিও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো পায়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার এই নতুন বাস্তবতায় তালেবান শুধু আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ নয়, বরং আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি-সুরক্ষায় তালেবানের ভূমিকায় কিভাবে পরিবর্তন আসবে, তা নির্ভর করবে এই তিন দেশের পরস্পর ক্রিয়াকলাপ ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
তবে নিশ্চিত এক বিষয় যে, তালেবান এখন আর কেবল আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠী নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশল ও সংঘাতের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন