বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:২০ ১২ অক্টোবর ২০২৪
'রোদ্রের প্রখরতায়,
যেখানে শান্তি বিলায়
উৎসুক কবি এসে
যেখানে ছন্দ মিলায়।
সপ্তাহের একটি দিনে,
বইপ্রেমীরা আড্ডা জমায়।'
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা দেখলেই নিজের অজান্তেই এমন ছন্দ আসে ভাবনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের মাঝামাঝি এই বটবৃক্ষদ্বয়ের অবস্থান। এই বৃক্ষ দুটি দাঁড়িয়ে আছে কতশত যোজনা বিয়োজনের স্মৃতি, গল্প ও বন্ধুত্বের সাক্ষী হয়ে! সকাল থেকে সন্ধ্যা শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে ওঠে এখানে। শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা ল্যাব শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত, তখনই বটবৃক্ষের ছায়া আর সুনিবিড় হালকা বাতাস যেন একমুহূর্তেই ক্লান্তি দূর করে।
সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকগুলো সভা-সমাবেশ এই বটতলায় শুরু হয়েছে। এই বটবৃক্ষের পাদদেশ যেন দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশের অনন্য সাক্ষী। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বটবৃক্ষ চত্বরে করা হয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক নানা আয়োজন। শীতকে বরণ করে নিতে প্রতিবছর সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের কুহেলিকা উৎসবে মাতোয়ারা থাকে পুরো বটতলা। যেখানে ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, ছাঁচ পিঠা, খোলাজালি পিঠা, চাপড়ি পিঠাসহ হরেক রকম পিঠা পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের পিঠা উৎসব, বইমেলা, খেলাধুলা যেন পরিবেশকে মুখর করে তোলে। যার মাধ্যমে গ্রামীণ সংস্কৃতির সাথে বটবৃক্ষের অতীত ইতিহাসের এক অমীয় মেলবন্ধন ফুটে ওঠে।
এছাড়াও বটবৃক্ষের ছায়াতলে লেখকদের সংগঠন বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের লেখা প্রদশর্নীতে প্রদর্শন করা হয় দেশের স্বনামধন্য পত্রিকায় প্রকাশিত সকল তরুণ প্রজন্মের লেখকদের লেখা।
প্রতি বুধবার আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্যের পাঠাগার উৎসব বটতলাকে করে তোলে আরও প্রানবন্ত। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দসই বই সংগ্রহ করে পড়তে পারে। ইবি সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের চর্চা ও যুক্তিনির্ভর মননের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক পাঠচক্র চলে এই বটবৃক্ষকে ঘিরে। যেখানে সাহিত্য, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, দর্শন, ইতিহাস, বিশ্বসাহিত্য, সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। যা বটতলার ঐতিহ্যের ঝুঁড়িকে করে আরও সমৃদ্ধ।
শীতের সকালের মিষ্টি সূর্যের পরশ পেতে প্রকৃতিপ্রেমীরা বসে বটতলা চত্বরে। মিষ্টি রোদের পরশ পাথরের ঠাই বটবৃক্ষ দিয়ে যায় অবিরাম।ক্যাম্পাসে বটতলা যেন ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু।
কপোত- কপোতির খুঁনসুটিতে উঠে আসে তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা।
তাদের ভাষ্যমতে,
বটতলার এই সুবিশাল প্রান্তরে,
টাইলসে বসে হাতে রেখে হাত,
অবুঝ মনের কত স্বাদ-আহ্লাদ!
বলতে তুমি, আমিও শুনতাম নিরবে,
কানেকানে কানাকানি শুনশান এ ভবে।
শিউলি বকুলের মালা পড়াতে গলায়,
ব্যাকুল উন্মাদনা, স্বপ্ন উচ্ছ্বাস গাঁথা সে মালায়।
তপোবন প্রেমিক আশিকুর রহমান বলেন, নিয়মিত আমার এখানে বসা হয়। চায়ের হাতে বন্ধুদের আড্ডা আর আশপাশের গতিময়তা সত্যিই আমাকে বারবার এখানে আসতে বাধ্য করে। আমি চাই সবাই বটতলার আঁচলে এসে নিজেদের ধন্য
করুক। সেইসাথে কর্তৃপক্ষ যেন এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করে ও চারপাশে গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে চায়ের কাপে ওঠা আড্ডা থেকে বন্ধুত্ব সব এই বটবৃক্ষের শীতল ছায়ায় মাখানো। আড্ডায় গিটারের টিং টং শব্দে বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। রম্য বিতর্কের আয়োজনে বটবৃক্ষের মতোই দৃঢ়চেতায় নিজেকে
গড়ে তোলে শিক্ষার্থীরা। তাই অকপটে বলতে দ্বিধা নেই বটবৃক্ষই ইবির প্রাণকেন্দ্র।
বিজ্ঞাপন