ব্যবসাকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে

ব্যবসাকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে

রুবানা হক সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ

রুবানা হক সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ
রুবানা হক সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ

প্রকাশিত: ০৭:৪০ ৬ আগস্ট ২০২৪

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা তৈরি হয়। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে গত রোববার থেকে অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

গত ১৫ দিনে ব্যবসা–বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেওয়া খুব দুষ্কর হবে না, যদি আমরা ব্যবসায়ীরা সবাই একসঙ্গে থাকি। তবে সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতি হয়েছে—আমাদের অনেক তরুণ প্রাণ ঝরে গেছে। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁরা বাংলাদেশের আগামী ছিলেন। তাঁদের আমাদের শ্রদ্ধাভরে সব সময় স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে, আমরা কিছু হলেই সব সময় বলি, আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল; কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্য ব্যবসা, ব্যবসার জন্য মানুষ নয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রতে৵ক মানুষ ও সম্প্রদায়ের মতো ব্যবসায়ী সমাজও স্থিতিশীলতা আশা করে। আমরা মনে করি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ বা রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। রাজনীতি ও ব্যবসা—দুটি একেবারে আলাদা। যিনি রাজনীতি করবেন, তাঁকে সংসদে যাওয়ার আগে ব্যবসায়িক সব স্বার্থ ত্যাগ করে তারপর যেতে হবে। যে কারণে আমাদের কষ্ট হয়েছে, আমরা নানা দ্বন্দ্বে ভুগেছি। সেটির মুখ্য কারণ, বহু ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন। বহু রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। এটা জোরালোভাবে বলতে চাই, আগামী দিনে যেসব ব্যবসায়িক সংগঠন আছে, সেগুলোর যত নির্বাচন হবে, তা যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকে। রাজনীতিকরণ আসলে ব্যবসাকে শেষ করে দেয়।
ব্যবসার রাজনীতিকরণ হলে তাতে হয়তো গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর সুবিধা হয়; কিন্তু এতে বিপদে পড়ে সাধারণ মানুষ। আমরা আশা করি, সামনের দিনগুলো সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে। ব্যবসায়ীরা কোনো কারণেই যেন ক্ষমতার লোভে ক্ষমতার ব্যবহার করে ব্যবসা বাড়ানো বা বিত্তশালী না হন। সহজ করে বললে, ক্ষমতাকে ব্যবসায়ীরা যাতে বিত্তশালী হওয়ার জন্য ব্যবহার না করেন। তাতে মহা অপরাধ হবে। কারণ অনেক প্রাণের বিনিময়ে একটা পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য স্বচ্ছতা খুবই দরকার।
তৈরি পোশাক খাতের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব কারখানা খুলে দেওয়া দরকার। কারণ এ খাতে এক দিন কারখানা বন্ধ থাকা মানে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি ক্রেতারাও খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের আস্থার জায়গা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে গেছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিজিএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছ থেকে কোনো নীতি–সিদ্ধান্ত পাচ্ছেন না বিদেশি ক্রেতারা। ফলে তাঁদের মধ্যে বর্তমান ও আগামী দিনের ক্রয়াদেশ দেওয়া নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনে অনেক বিদেশি ক্রেতা আমাকে ফোন করে তাঁদের শঙ্কা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু ক্রেতা তাঁদের কিছু ক্রয়াদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। যদি আমরা দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কারখানা চালু করতে না পারি, তাহলে এ ক্ষতি পোষানো খুব কষ্টকর হবে।

বিজ্ঞাপন