বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৩২ ২০ আগস্ট ২০২৪
আজ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে তিনি শাহদাৎ বরণ করেন। মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে, যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। তার বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন।
শৈশব থেকেই তার মেধার পরিচয় ও স্বীকৃতির নিদর্শন মিলতে থাকে। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাশ করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। কর্মজীবনের বিভিন্ন ধাপে তিনি জেনারেল ডিউটি পাইলট, ফ্লাইং অফিসার, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট, ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর এবং জেট ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কমিশনপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ার বেজের ২ নম্বর স্কোয়াড্রনে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর দুই মাসের ছুটি নিয়ে সপরিবারে ঢাকা আসেন।
দেশে থাকাকালীন সময় ২৫ মার্চের কালরাতে তিনি ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খোলেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধবাহিনী। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ইপিআর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমানবাহিনী এফ-৮৬ স্যাবর জেট থেকে তাদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে। মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন। তাই ঘাঁটি পরিবর্তন করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তার বাহিনী।
এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন এবং ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান। কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বিমান দখলের জন্য ২১ বছর বয়সি রাশেদ মিনহাজ নামে একজন শিক্ষানবীশ পাইলটের উড্ডয়নের দিন (২০ আগস্ট, ১৯৭১) টার্গেট করেন।
মিরপুরব শহীদ বুদ্দিজীবিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের শহীদ বেদিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষে এয়ার ভাইস মার্সাল সালেহ উদ্দিন শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পরিবারের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বড় ভাই ডা. মাহাবুবুর রহমান শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মামুনর খান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ডা. উজ্জ্বল কুমার রায় নির্বাহী সদস্য ইমাম হাসান রোমিত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
২০ আগস্ট ১৯৭১-এ মতিউর রহমান এবং রাশেদ মিনহাজ স্ব স্ব দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তান সরকার মতিউর রহমানের মৃতদেহ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে সমাহিত করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্তানে পুনরায় দাফন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন
বিজ্ঞাপন