বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ | ১৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৪ ৩০ জুলাই ২০২৫
সাবেক আইজিপি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় বিস্ফোরক জবানবন্দি দিয়েছেন, যেখানে তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে হওয়া রাজনৈতিক আন্দোলন দমন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।
গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার সেই জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মন্ত্রীর মুখে হারুন ছিলেন “জ্বীন”—অর্থাৎ অতিপ্রাকৃতভাবে দক্ষ, তৎপর ও কাজের মানুষ।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আদালত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মামুন তার জবানবন্দিতে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হারুনকে খুবই কর্মতৎপর ও সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যক্তি হিসেবে দেখতেন।”
রাতের বৈঠকে হতো ‘আন্দোলন দমন’ পরিকল্পনা
জবানবন্দিতে মামুন আরও বলেন, “২০২৩ সালের ১৯ জুলাই থেকে আন্দোলন চলাকালীন প্রায় প্রতিরাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে বৈঠক হতো। সেসব বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন ডিবির হারুন, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসার বাহিনীর ডিজি, এনটিএমসির কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সেখানে প্রতিদিন আন্দোলন দমন সংক্রান্ত পরিকল্পনা হতো।”
মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর: জবানবন্দি
আইজিপির জবানবন্দিতে বলা হয়, “আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই আমাকে লেথাল উইপেন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান।”
তিনি আরও বলেন, “র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। সেই সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন অত্যন্ত উৎসাহী।”
ভয়ভীতি ও ‘মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন’ পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তার জবানবন্দিতে বলেন, এক কোর কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আন্দোলনের ছয়জন প্রধান সমন্বয়কারীকে আটক করে ভয়ভীতি, মানসিক চাপ ও নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের দিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়া করানো হবে, যাতে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসে।
অনুতপ্ত মামুন, দায় অস্বীকার
জবানবন্দির শেষাংশে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গুলি ও দমন-পীড়নের ঘটনায় অনুশোচনা প্রকাশ করে আদালতের কাছে ক্ষমা চান। তবে জবানবন্দিতে তিনি স্পষ্ট করে নিজের ভূমিকা বা সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
উল্লেখ্য, মামুন বর্তমানে আসামির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে “রাজসাক্ষী” হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার এই আবেদন মঞ্জুর করেছে, শর্ত ছিল—তিনি সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করবেন।
এই জবানবন্দি প্রকাশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহারের অভিযোগ এবং সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
বিজ্ঞাপন