শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ | ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ ২৪ জুলাই ২০২৫
সরকারি চাকরিজীবীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের মতো কার্যকলাপে জড়িত হলে বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্তের বিধান রেখে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার। এই অধ্যাদেশটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে জারি করা হয়েছে, যার স্বাক্ষর করেছেন বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী।
নতুন এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র বা নির্দেশনা পালন না করেন কিংবা বাস্তবায়ন ব্যাহত করেন, অথবা অন্য কোনো কর্মচারীকে এ কাজে প্ররোচিত করেন, তবে তা সরকারি অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে, ছুটি বা যৌক্তিক কারণ ছাড়া সমবেতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনাকেও একইভাবে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ ধরনের অসদাচরণের জন্য অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে শাস্তিস্বরূপ নিম্ন পদে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর বা চাকরি থেকে বরখাস্ত – এই তিনটির যেকোনো একটি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এই বিষয়গুলো অধ্যাদেশের ধারা ৩৭(ক) এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর তাকে সাত (৭) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে এবং সে শুনানি চায় কি না, তা নোটিশে উল্লেখ থাকবে। যিনি অভিযোগ গঠন করবেন, তিনি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কিংবা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি হতে পারেন।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো—রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী চাইলে, আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি সেই আবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত মনে করলে চূড়ান্ত আদেশ দেবেন। অধ্যাদেশে উল্লেখ আছে, এই রিভিউ-ই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু সংসদ বর্তমানে ভেঙে গেছে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তাই রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে এই অধ্যাদেশ জারি করেছেন। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও ‘আন্দোলন’ শব্দটি সরাসরি ব্যবহার করা হয়নি, তবে ধারা ও শব্দচয়ন থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, সরকারি চাকরিজীবীদের ধর্মঘট, কর্মবিরতি, কাজ থেকে বিরত রাখা বা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার মতো কার্যকলাপই এই অধ্যাদেশের মূল লক্ষ্য। এ অধ্যাদেশ কার্যকর হলে, সরকারি কর্মচারীরা ভবিষ্যতে এমন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে গুরুতর শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
বিজ্ঞাপন