রবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ছবি: সংগৃহীত
প্রকাশিত: ০৯:২১ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ঢাকা: স্ট্রোকজনিত কারণে শরীরের ডান পাশ অচল হয়ে গেছে সাঈদ হোসেনের (৪২)। এর সঙ্গে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ এবং হরমোনের সমস্যা। রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ফলোআপের জন্য এসেছিলেন তিনি। তার স্ত্রী ফাহমিদা খাতুন জানান, গত বছর স্ট্রোকের পর থেকে সাঈদ দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। তার উচ্চ রক্তচাপসহ আরও বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। চিকিৎসার জন্য মাসে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বর্তমানে ওষুধের দাম বৃদ্ধির ফলে মাসে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, যা বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফেক্সোফেনাডিন প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ৯ টাকা, অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতি পিস ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, মন্টিলুকাস্ট প্রতি পিস ১৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা, ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২ এর প্রতি পিস ৭ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা হয়েছে। এছাড়া ইসমিপ্রাজল ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা, লোসারটান পটাশিয়াম ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি পিস ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ১০ পিসের দাম ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়েছে।
বাড্ডার হোসেন মেডিকেল হলে ওষুধ কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তারেক মাহমুদ বলেন, ‘আমি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। আগে এক পাতা ওষুধ ৮০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটি ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আয় একই থাকায় খরচ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে নিজের পকেট থেকে ৬৮.৫০% ব্যয় করতে হয়, যার মধ্যে ৬৪% ব্যয় হয় ওষুধ কেনার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ উৎপাদন হয় এবং কোম্পানিগুলো আগ্রাসী মার্কেটিং করে। ফলে ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বাড়ে, যা খরচ বাড়ানোর অন্যতম কারণ।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো দায়িত্ব পেয়েছি। আমার জানা মতে, গত পাঁচ-ছয় মাসে ওষুধের দাম বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধের দাম বাড়েনি। বাজারে যদি দাম বেড়ে থাকে, তবে তা অন্য কারণে বেড়েছে।’
দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বর্তমান অবস্থা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার ব্যয় কমাতে এবং ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে জনমহলে।
বিজ্ঞাপন