সোমবার , ২৩ জুন, ২০২৫ | ৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ ২২ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার পর। হামলার জবাবে ইরান সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ইসরায়েল লক্ষ্য করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে, বিশেষ করে যখন পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গতকাল গভীর রাতে ইরানের নাতাঞ্জ, ফরদো এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় একযোগে আঘাত হানে। এসব স্থাপনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ভাষ্যমতে, এটি ছিল “প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ”, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার বিস্তার ঠেকানো। অন্যদিকে, তেহরান এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে এবং প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয়।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এক বিবৃতিতে জানায়, “কিছুক্ষণ আগে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ধেয়ে আসে। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং হুমকি প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে।” একইসাথে আইডিএফ দেশটির জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পাল্টা হামলা কেবল একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এটি বৃহৎ সামরিক সংঘর্ষের সূচনা হতে পারে। ইরান দাবি করছে, তারা কৌশলগতভাবে সীমিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, কিন্তু যদি আগ্রাসন অব্যাহত থাকে, তাহলে পূর্ণমাত্রায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা নিজেরা আত্মরক্ষায় প্রস্তুত এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে কঠোর জবাব দিতে দ্বিধা করবে না।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয়পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং অবিলম্বে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ ঘটনাটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে একাধিক দূতাবাস।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিমানবন্দর ও রেল যোগাযোগ আংশিকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে, এবং ইরানে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক তেলবাজারে এ ঘটনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে—তেলের দাম এক দিনে প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বহুদিন ধরে জমে থাকা বৈরিতা ও আস্থাহীনতা। এটি অনেকাংশে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ বা ২০১৯ সালের ইরান-ইসরায়েল সাইবার যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হয়ে উঠতে পারে। তবে এবার পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ এখানে সরাসরি পরাশক্তিরা মুখোমুখি হচ্ছে, যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্য এখন এক বিস্ফোরক পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিশ্ববাসী উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করছে—এই সংঘর্ষ কোথায় গিয়ে শেষ হয়। যুদ্ধের দামামা কি সত্যিই বেজে উঠেছে, না কি আন্তর্জাতিক কূটনীতিই শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে—এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে।
বিজ্ঞাপন