ভারতের সামনে নতুন বিপদ, তুরস্কের আমরাম মিসাইল আনছে পাকিস্তান!

ভারতের সামনে নতুন বিপদ, তুরস্কের আমরাম মিসাইল আনছে পাকিস্তান!

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:৫৫ ১৮ মে ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এই দেশটি এবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শতাধিক ‘AMRAAM’ (AIM-120 Advanced Medium-Range Air-to-Air Missile) মিসাইল কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই চুক্তির আর্থিক পরিমাণ আনুমানিক ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা প্রযুক্তি হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিভিন্ন সংস্করণসহ সম্পূর্ণ একটি সামরিক প্যাকেজ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

‘আমরাম’ মিসাইল একটি মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র, যার ‘120C’ সংস্করণ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত সংস্করণ হিসেবে স্বীকৃত। এটি সলিড-ফুয়েল চালিত রকেট মোটরের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫,০০০ কিমি গতিতে ১৮০ কিমি দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই মিসাইল যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫, এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সফলভাবে সংযুক্ত করা যায়, যা এই অস্ত্রকে আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত করেছে।

তুরস্কের এই অস্ত্রচুক্তি নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য হলেও এর আন্তর্জাতিক প্রভাব পড়ছে সরাসরি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে। বিশেষ করে ভারতের পক্ষ থেকে এই চুক্তিকে অত্যন্ত সন্দেহজনকভাবে দেখা হচ্ছে। ভারতের উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো—তুরস্ক ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সামরিক মৈত্রী। তুরস্ক ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যা কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতবিরোধী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মিসাইল চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের হাতে যে অস্ত্র আসছে, তা ভবিষ্যতে পাকিস্তানের হাতে পৌঁছাতে পারে এবং সেই অস্ত্র একদিন ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে। এই আশঙ্কার ভিত্তি রয়েছে অতীতের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতায়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সদস্য নিহত হন। এর জবাবে ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যা দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ঘটে ১৯৭১ সালের পর প্রথম ভারত-পাকিস্তান আকাশযুদ্ধ। পাকিস্তান সে সময় তার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘আমরাম’ মিসাইল ছুঁড়ে ভারতীয় যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে। ভারতীয় সেনা সূত্র থেকে তখন জানানো হয়েছিল, পাকিস্তান এই মিসাইল ব্যবহার করেছে, এবং তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। যেহেতু পাকিস্তানের কাছে কেবল এফ-১৬ রয়েছে যা এই মিসাইল বহনে সক্ষম, তাই এই দাবি এক অর্থে বাস্তবতাসম্পন্ন।

এই ঘটনার পর থেকেই নয়াদিল্লি ‘আমরাম’ মিসাইল নিয়ে অতিমাত্রায় সজাগ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এখন তুরস্ক যদি এই একই মিসাইল সংগ্রহ করে এবং পরে তা কোনোভাবে পাকিস্তানের হাতে পৌঁছে যায়, তাহলে পরিস্থিতি আবারো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তুরস্ক বর্তমানে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ এফ-১৬ বহরের অধিকারী। দেশটির কাছে প্রায় ২৭০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে, যা একসাথে এত বড় আকারে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশের নেই। ফলে, এই আধুনিক মিসাইল তুরস্কের জন্য যেমন কৌশলগতভাবে উপকারী, তেমনি ভারত মনে করছে, এটি একটি সম্ভাব্য হুমকি, যদি পাকিস্তানের সঙ্গে প্রযুক্তি বা অস্ত্র ভাগাভাগির ঘটনা ঘটে।

ভারতের একাধিক গণমাধ্যম ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্র দেশের তৈরি অস্ত্র যদি মিত্রের শত্রুর হাতে গিয়ে ব্যবহার হয়, তাহলে তা শুধু কূটনৈতিক নয়, নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিও তৈরি করে।” আমরাম মিসাইলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র যখন এমন দুই দেশের মাঝে স্থান পাচ্ছে যাদের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক জটিল, তখন সেই অস্ত্র ব্যবহারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, নয়াদিল্লি বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু করার চিন্তা করছে। পাশাপাশি ভারত তার নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং পাল্টা আক্রমণের সক্ষমতা নিয়েও নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্ক-পাকিস্তান সামরিক ঘনিষ্ঠতা এখন আর শুধু অস্ত্র কেনাবেচার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি একটি বৃহত্তর কৌশলগত অক্ষ (strategic axis) হিসেবে গড়ে উঠছে। এই অক্ষ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে, বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, যেখানে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র।

বর্তমানে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, তা হলো—এই ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ক (তুরস্ক-পাকিস্তান-চীন) এবং তাদের কৌশলগত সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা কতটা প্রভাবিত করবে? ভারতের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা মহল এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এখন ব্যস্ত। এবং এরই মাঝে 'আমরাম' মিসাইল চুক্তি যেন এক নতুন অশনি সংকেত হয়ে ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন