শনিবার , ১৭ মে, ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:৪৬ ১৭ মে ২০২৫
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ভেতরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানোর আগে ভারত সরকার ইসলামাবাদকে অবহিত করেছিল। তার এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জয়শঙ্করের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন।
রাহুল গান্ধী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন, “হামলার আগে পাকিস্তানকে জানানো ছিল একটি অপরাধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন ভারত সরকার এটি করেছে। কে এর অনুমতি দিয়েছিল? এর ফলে আমাদের বিমানবাহিনী কতগুলো বিমান হারিয়েছে?” তিনি তার বক্তব্যের সঙ্গে জয়শঙ্করের একটি ভিডিও-ও যুক্ত করেন, যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “অপারেশনের শুরুতে, আমরা পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলি, ‘আমরা সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছি এবং আমরা পাক সেনাদের কিছু করব না। এতে তাদের দূরে থাকার সুযোগ ছিল।’”
জয়শঙ্করের এই বক্তব্যের জেরে কেবল কংগ্রেস নয়, নয়াদিল্লি ভিত্তিক আম আদমি পার্টিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলটির রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং বলেছেন, “যখন একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন, হামলার আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছিল, তখন এটি দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এটি ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি চরম অসম্মান। পাকিস্তানকে আগে জানানো ছিল অভূতপূর্ব ও ক্ষমার অযোগ্য।”
তিনি আরও বলেন, “এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উত্তর দিতে হবে— ট্রাম্প যে বলেছেন, তা কতটা সত্যি? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কতটা নির্ভরযোগ্য? এই সিদ্ধান্ত কি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ছিল? ভারতের জনগণের এই বিষয়ে জানার অধিকার রয়েছে। মোদি সরকার কি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বেঈমানি করেছে?”
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB) দাবি করেছে, জয়শঙ্করের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বলছে, তিনি কখনও বলেননি যে পাকিস্তানকে হামলার আগে সরাসরি জানানো হয়েছিল। তবে বিতর্কিত ভিডিওতে তাকে স্পষ্টভাবেই এই কথা বলতে শোনা যাচ্ছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এখনও তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনীতি ও সেনাবাহিনীর মনোবল নিয়েও বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত, মোদি সরকারের ব্যাখ্যা এবং জয়শঙ্করের বিচারের দাবিও উঠেছে।
এই ইস্যু নিয়ে চলমান উত্তেজনা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং আগামী দিনে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
বিজ্ঞাপন