ভারত বনাম পাকিস্তান যুদ্ধ: কার কী ক্ষতি হয়েছে?

ভারত বনাম পাকিস্তান যুদ্ধ: কার কী ক্ষতি হয়েছে?

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৯:২৫ ১১ মে ২০২৫

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে কাশ্মীরের পাহেলগাম অঞ্চলে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করে। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভারত “অপারেশন সিন্ধুর” নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ১৮ জন সামরিক সদস্য নিহত হন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়, যার মধ্যে রয়েছে একটি ড্রোন কন্ট্রোল সেন্টার ও দুইটি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল হাব। এর পর পাকিস্তান পাল্টা "অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস" চালিয়ে ভারতের উধমপুর, শ্রীনগর ও পাঠানকোটের মতো কৌশলগত এয়ারবেসে আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষ চারদিন স্থায়ী হয় এবং দুই পক্ষেই প্রাণহানি ও বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে জানা যায়, এই যুদ্ধে তাদের ৫০-৭০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের হামলায় ভারতের শ্রীনগর, উধমপুর ও পাঠানকোট এয়ারবেসসহ চণ্ডীগড়ের অস্ত্রাগার ও আদমপুরের S-400 এয়ার ডিফেন্স ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেসামরিক ক্ষতির দিক থেকেও ভারতের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রায় ৩০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের ক্ষতি ব্যাপক। যুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজারে প্রায় ৮২ বিলিয়ন ডলার মূলধন হারিয়ে যায়। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (নিফটি ৫০) এবং বিএসই সেনসেক্স উভয়ই বড় ধসের মুখে পড়ে। উত্তর ভারতের আকাশপথ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলারের লোকসান হয়েছে। আইপিএল স্থগিত হওয়ায় আয় হারায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। সামরিক অপারেশনে খরচ হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। সব মিলিয়ে ভারতের আনুমানিক মোট ক্ষতি প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, পাকিস্তানও এই যুদ্ধে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। ভারতের হামলায় তাদের ১৮ জন সামরিক সদস্য নিহত হন এবং ৫০ জনের বেশি আহত হন। ইসলামাবাদ, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি ও কোয়েটা অঞ্চলে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় আবাসিক এলাকা, স্কুল ও হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অন্তত ৬৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং আরও প্রায় ২০০ জন আহত হন। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও তা দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায় বড় প্রভাব ফেলে। কেএসই-১০০ স্টক সূচক ৪.১ শতাংশ কমে যায়, যার ফলে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূলধন হারিয়ে যায়। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) স্থগিত হওয়ায় ক্ষতি হয় ১০ মিলিয়ন ডলার এবং আকাশপথ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক বিমান খাতে লোকসান হয় ২০ মিলিয়ন ডলার। সামরিক খাতে প্রতিদিনের খরচ হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার, এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যয়ে মোট খরচ দাঁড়ায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের আনুমানিক মোট ক্ষতি প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।

এই যুদ্ধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ প্রায় ৩০টি দেশ উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। অবশেষে ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যদিও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। সামরিক পর্যায়ে সংঘর্ষ বন্ধ হলেও উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বহাল থাকে। দুই দেশের ডিজিএমও (Director General of Military Operations) পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে বের করার চেষ্টার ঘোষণা এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘর্ষ দেখিয়ে দিল যে সামরিক পথ নয়, বরং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই স্থিতিশীলতা আনতে পারে।

বিজ্ঞাপন