বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:১৩ ৬ অক্টোবর ২০২৪
‘বন্ধন ব্যাংক’–এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও। চন্দ্র শেখর ঘোষের এই অসাধারণ যাত্রার গল্পের পরতে পরতে রয়েছে চূড়ান্ত অধ্যবসায় এবং দূরদৃষ্টি প্রায় শূন্য থেকে শুরু। সম্প্রতি তিনি সিইও পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে গত জুলাইয়ে পদ ছেড়েছেন। গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতাভিত্তিক এই ব্যাংকের বাজারমূল্য ছিল ২৯ হাজার ৭৮৭ কোটি রুপি।
চন্দ্র শেখরের জন্ম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। ১৯৬০ সালে তাঁর জন্ম। মা–বাবা একটি অতি সাধারণ মিষ্টির দোকান চালাতেন। আর্থিক অনটনের ভেতর বড় হয়েছেন। বাবায় সল্প আয়ে সংসারে কখনো সচ্ছলতা আসেনি। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পড়ালেখার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন চন্দ্র শেখর। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে চলে আসেন বাংলাদেশে। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে ডিগ্রি নেন। আর্থিক অনটনের কারণে কিছু উপার্জনের চেষ্টা করতে থাকেন। শিশুদের পড়িয়েছেন, থেকেছেন আশ্রমে।
১৯৮৫ সালে জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বাংলাদেশের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে যোগ দেন চন্দ্র শেখর। এ দেশে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের রূপান্তরমূলক প্রভাব নিজ চোখে দেখেছেন। ভারতেও একই ধরনের মডেলের সামাজিক ব্যবসা চালু করতে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বাংলাদেশ থেকেই।
১৯৯৭ সালে কলকাতায় ফিরে ভিলেজ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে নারীদের ঋণসহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেন। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা মাত্র দুই লাখ রুপি দিয়ে শুরু করেন এই উদ্যোগ। মাত্র ১২ জন কর্মচারীর একটি দল নিয়ে যাত্রা করে বন্ধন। ২০০২ সাল নাগাদ সংস্থাটি প্রায় ১ হাজার ১০০ নারীর মধ্যে মোট ১৫ লাখ রুপি ঋণ বিতরণ করে এই ব্যাংক।
সংস্থাটি দ্রুত বড় হতে থাকে। ২০০৯ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকে (আরবিআই) একটি নন–ব্যাংকিং আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি) হিসেবে নিবন্ধিত হয় বন্ধন।
চন্দ্র শেখর ঘোষের এই উদ্যোগ অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ নারীর জীবন বদলে দেয়। ২০১৩ সালে আরবিআই নতুন ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করলে চন্দ্র শেখর ঘোষ সুযোগটি লুফে নেন, তিনিও আবেদন করেন। দুই বছর পর, ২০১৫ সালে বন্ধন ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।
বর্তমানে বন্ধন ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ২৬ লাখ। ৩৫টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলজুড়ে ৬ হাজার ২৬২টি এলাকায় পরিষেবা দেয়। এই ব্যাংকের এখন বাজারমূল্য ২৮ হাজার ৯৯৭ কোটি রুপি।
চন্দ্র শেখরের এই অবিশ্বাস্য উত্থান যে কারও জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। যে ছেলেটি একসময় তাঁর পারিবারিক মিষ্টির দোকানে সাহায্য করত, তিনিই একদিন একটি বড় ব্যাংকের সিইও হয়েছেন। বহু মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন