“আবর্জনায় লুকানো সোনা: পশুর হাড়-শিং ও অণ্ডকোষে কোটি টাকার গোপন ব্যবসা”

“আবর্জনায় লুকানো সোনা: পশুর হাড়-শিং ও অণ্ডকোষে কোটি টাকার গোপন ব্যবসা”

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:০৯ ৩১ মে ২০২৫

গরু, মহিষ বা ছাগলের হাড়, শিং, এমনকি অণ্ডকোষ—যেগুলোকে আমরা প্রতিদিনই আবর্জনা মনে করে ফেলি, সেগুলিই অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে কোটি টাকার আয়ের উৎস। বাসাবাড়ি, হোটেল কিংবা কসাইখানায় এসব উচ্ছিষ্ট অনায়াসে ফেলে দেওয়া হলেও, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে। সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে এক বিশাল চেইন—যা পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ শিল্প, পশুখাদ্য, রপ্তানি এবং বিভিন্ন পণ্যের কারখানায়।

প্রতিদিন সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পশুর হাড়, চামড়ার টুকরো, শিং ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে বিক্রি হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। এই প্রক্রিয়াজাতকরণে হাড় গুঁড়া করা, শুকানো ও প্যাকেটজাত করাসহ একাধিক ধাপ রয়েছে। এসব উপাদান ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি চামড়াজাত শিল্প, পশুখাদ্য ও সৌন্দর্যপণ্য তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

সিলেট অঞ্চলজুড়ে অন্তত ১০০ জনের বেশি ব্যবসায়ী এই খাতে সক্রিয়ভাবে জড়িত। শুধু কোরবানির সময় নয়, সারা বছর ধরেই গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার হাড়, শিং ও অণ্ডকোষ সংগ্রহ ও বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করছেন তারা। ধারণা করা হয়, প্রতি মাসে শুধুমাত্র সিলেট অঞ্চল থেকেই প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে এই ব্যবসায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পশুর হাড় ও অণ্ডকোষে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও কোলাজেন, যা ক্যালসিয়াম ও ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শিং ও অন্যান্য কঠিন অংশ জুতা ও সৌন্দর্যপণ্য তৈরি, এমনকি শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বাইরেও উন্নতমানের হাড় বিদেশে রপ্তানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে।

তবে এই খাতটির উন্নয়ন এখনও অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। অসংগঠিত হওয়ায় এবং কোনো সরকারি নজরদারি না থাকায় পুরো প্রক্রিয়া চলছে বেসরকারিভাবে, যেখানে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ন্ত্রণ করছে বাজার। এতে প্রকৃত সংগ্রাহক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় এক হাড় ব্যবসায়ী বলেন, “এই ব্যবসা করলে অনেকে আমাদের ছোটলোক ভাবে। অথচ আমরা প্রতিমাসে লাখ টাকার উপরে লাভ করি। যদি সরকারি প্রশিক্ষণ আর সহায়তা থাকতো, তাহলে আরো উন্নতমানের প্রক্রিয়াজাত করা যেতো এবং বিদেশে রপ্তানিও বাড়ানো যেত।”

বিশেষজ্ঞদের মত, সরকার যদি এই ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়, তাহলে এটি হতে পারে একটি বড় আকারের রপ্তানিমুখী শিল্প। এতে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও একটি সম্মানজনক ও লাভজনক জীবিকা অর্জন করতে পারবেন।

আবর্জনা নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও নজরদারির মাধ্যমে পশুর হাড়, শিং ও অণ্ডকোষকে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে একটি শক্তিশালী শিল্পখাত। যেখানে লুকিয়ে আছে হাজারো মানুষের জীবিকা আর দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা।

বিজ্ঞাপন