সোমবার , ২৩ জুন, ২০২৫ | ৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:৩৭ ২২ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্য আবারও রক্তক্ষয়ী উত্তেজনার মুখে। রোববার ভোররাতে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন পরমাণু স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় অংশ নেয় মার্কিন যুদ্ধবিমান বি-২, যা মাটির নিচে নির্মিত ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান ঘাঁটিগুলোর ওপর নিক্ষেপ করে বিধ্বংসী বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা। এই হামলার মধ্য দিয়ে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এবার আমাদের পালা। আমেরিকার নৌবহরে পালটা হামলা চালাবে ইরান।” পাশাপাশি তেহরান হুমকি দিয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই হুমকি বাস্তবে পরিণত হয়, ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে শঙ্কার সঞ্চার হয়।
এই সঙ্কটময় মুহূর্তে নিজের দেশ ও পরিবার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইরানি বংশোদ্ভূত আন্তর্জাতিক অভিনেত্রী মান্দানা করিমি। বর্তমানে ইউরোপে অবস্থানরত এই অভিনেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন বার্তায় জানান, “আমি ঠিক নেই। আমি চেষ্টা করছি স্বাভাবিক থাকতে, কিন্তু পারছি না। প্রতি মুহূর্তে ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কীভাবে শান্ত থাকব, যখন দেখছি শিশুদের মরতে হচ্ছে? শুধু ফিলিস্তিন বা ইরান নয়, গোটা বিশ্বেই মার্কিন হামলা চলছে। অথচ সবাই নীরব।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি ইউরোপের শান্ত রাস্তায় হাঁটছি, কিন্তু মনে হচ্ছে আমি একটা ভূত। আমার একাংশ এখনও ইরানে রয়ে গেছে— যেখানে রয়েছে আমার মা, ভাই, ভাইপো, ভাইজি। মনে হয়, পরের ক্ষেপণাস্ত্রটা হয়তো আমাদের বাড়িতেই পড়বে।”
অভিনেত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। কিন্তু নিজের দেশকে আগুনে পুড়তে দেখা, এবং সেই আক্রমণকারীদের প্রশংসা শুনতে হওয়া— এটা সহ্য করা যায় না। ইরান শুধু একটি দেশ নয়, ইরান আমার মায়ের হাতের ছোঁয়া, ধুলোর মাঝে জুঁইফুলের গন্ধ, আমার শৈশবের ঘুমপাড়ানি গান। সেই ইরান আজ ধ্বংসের মুখে।”
বিশ্ববাসীর প্রতি আর্জি জানিয়ে মান্দানা করিমি বলেন, “আমি ভালো নেই। দয়া করে আপনারাও চুপ করে থাকবেন না। প্রতিবাদ করুন। আপনারা চুপ থাকলে মনে হবে সত্যিই কিছু ভুল হচ্ছে। এখনই সময় সঠিক অবস্থান নেওয়ার।”
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায়, তবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে সহিংসতা। তাতে একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে, তেমনি বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহ, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে বিপুল নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যতটা রাজনৈতিক ও সামরিক, তার চেয়েও বেশি মানবিক। আর সেই মানবিক চিত্রই তুলে ধরছেন মান্দানা করিমির মতো মানুষরা— যারা দূরদেশে থেকেও বুকভরা কান্না নিয়ে নিজের দেশকে দেখতে পাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে।
বিজ্ঞাপন