মধ্যরাতে ‘পালিয়েছেন’ উপাচার্য, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরসহ ছয়জনের পদত্যাগ

মধ্যরাতে ‘পালিয়েছেন’ উপাচার্য, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরসহ ছয়জনের পদত্যাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮ ৮ আগস্ট ২০২৪


নিয়োগ প্রত্যাশীদের বিক্ষোভের মুখে গতকাল বুধবার মধ্যরাতে ‘পালিয়েছেন’ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। তবে ‘পালানোর’ দুই দিন আগে তিনি ১০ দিনের ছুটি নেন।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ থেকে ছয়জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সিদ্দিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় চালু করে দেওয়া হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরা আমাকে বারবার ছুটিতে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁদের চাপে আমি ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিতে বাধ্য হই। পরে ক্রমাগত তাঁরা আমাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকেন।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘গতকাল বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ বিএনপিপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ইন্ধনে স্থানীয় কিছু মানুষ লাঠিসোঁটা আর অস্ত্র নিয়ে আমার অবস্থানস্থলের আশপাশে জড়ো হয়ে ঘরের দরজা খোলার জন্য অনবরত হইহুল্লোড় শুরু করেন। তাঁরা বাসা আক্রমণ করে একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অরাজকতা চালান। এতে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। পরে সেনাবাহিনী এলে তাঁদের সঙ্গে নিরাপদে সরে যাই। এখানে পালানোর ঘটনা ঘটবে কেন? মূল ঘটনাকে আড়াল করতেই এটাকে নিয়োগপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ বলা যাচ্ছে। এখন তো নিয়োগের কোনো প্রক্রিয়াই চলছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬ আগস্ট তিনি ১০ দিনের জন্য ছুটি নেন। এরপর ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নেন।
এই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলমান পরিস্থিতিতে উপাচার্য তাঁর নির্ধারিত বাসভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ‘টিচার্স গার্ডেনে’ অবস্থান নেন। গতকাল রাত ১২টার দিকে একদল লোক টিচার্স গার্ডেনে গিয়ে উপাচার্যের অবস্থানস্থলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, উপাচার্য তাঁদের নিয়োগ দেবেন আশ্বাসে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যেহেতু এখন পট পরিবর্তন হয়েছে, তাই তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে। এ সময় কিছু শিক্ষকও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যকে নিয়ে উত্তেজনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে উপাচার্য জামাল উদ্দিন ভূঞাকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যান। এরপর থেকেই প্রচার হয়, উপাচার্য ক্যাম্পাস ছেড়ে ‘পালিয়ে’ গেছেন। শিগগির তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করছেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. সাদ উদ্দিন মাহফুজ, আইসিটির পরিচালক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অনিমেষ চন্দ্র রায়, নিরাপত্তা দপ্তরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক শামীমা নাসরিন এবং ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক মো. বাশিরউদ্দিন পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সিদ্দিকুল ইসলাম।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে ছয়জনই ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি’ ও ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সিদ্দিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ছয়টি হলের নামফলক ভাঙচুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরপরই কিছু বহিরাগত দুর্বৃত্ত ক্যাম্পাসে এসে সাতটি হলের মধ্যে ছয়টি হলের সামনের নামফলক ভেঙে ফেলেছে। দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, আবদুস সামাদ আজাদ হল, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী হল, শাহ এম এস কিবরিয়া হল ও সুহাসিনী দাস হলের নামফলক ভেঙে ফেলে দিয়েছে। তবে শাহপরান (রহ.) হলের নামফলক অক্ষত আছে।
একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বিএনপি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়া হল, সাইফুর রহমান হল এবং দুররে সামাদ হল নামে তিনটি হল ছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই এসব নাম বদলে যথাক্রমে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী হল, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হল ও সুহাসিনী দাস হল হিসেবে নতুন নামকরণ করা হয়। এর জের ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নামকরণ করা হলগুলোর নামফলক ভেঙে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন