বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৫২ ১০ আগস্ট ২০২৪
কেএমপির সদর দপ্তরে খুলনার রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন পুলিশ কমিশনার। বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা কেএমপির সদর দপ্তরে খুলনার রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন পুলিশ কমিশনার। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভবিষ্যতে খুলনা কীভাবে চলবে এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে, এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা মতামত তুলে ধরেন।
বিকেল ৪টায় খুলনা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে মতবিনিময় শুরু হয়ে চলে প্রায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়মান আহাদের সঞ্চালনায় সভায় ১৯ জন সংগঠক ও শিক্ষার্থী পুলিশ কমিশনারের সামনে তাঁদের মতামত ও দাবিদাওয়া পেশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্য নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নীরবতা পালনের মাধ্যমে সভা শুরু হয়।
সভায় প্রথম বক্তা হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে না। তারা জনগণের পুলিশ হয়ে কাজ করবে। খুলনা জেলা ও নগরে পুলিশ কোনো রকম দুর্নীতি-অনিয়ম করতে পারবে না, খুলনাকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি কোনো অপরাধীকে আশ্রয় দেন, তাহলে তিনি খুলনায় থাকতে পারবেন না।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও খুলনার অন্যতম সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলো দ্রুত সংশোধন করে মাঠে নামতে হবে। সারা দেশে যে সন্ত্রাসী আক্রমণ-হামলা চলছে, তা প্রতিরোধে পুলিশকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁরা খুলনা সদর থানার ওসিসহ যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশ দ্রুত মাঠে নামবে ও বাহিনীকে সংস্কার করবে। এখানে কোনো ধরনের নয়ছয় বরদাশত করা হবে না। তাঁরা পুলিশকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন। দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো লিয়াজোঁভিত্তিক প্রশাসন তাঁরা চান না। কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে পুলিশের ভূমিকা কী হবে? সেটাও পুলিশকে স্পষ্ট করতে হবে।
জহুরুল ইসলাম বলেন, দেশের মধ্যে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাঁরা যদি স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনাকে নামাতে পারেন, এ ধরনের গুটিকয়েক সন্ত্রাসী তাঁদের কাছে কোনো বিষয় না। রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সত্যিই আপনারা যদি দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষের ভালো চান, নিজেদের উন্নয়ন না করে জনগণের উন্নয়ন করতে চান, তাহলে আপনারা রাস্তায় আসুন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করুন। ময়লাগুলো পরিষ্কার করুন। আপনারা প্রমাণ করুন, আপনারা দেশের জন্য, দশের জন্য আন্দোলনে ছিলেন।’
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম বলেন, যৌক্তিক সংগ্রামে বাধাদানকারী খুলনার অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশে সহায়তাকারী ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ব্রজলাল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করতে হবে। কলেজ প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশ প্রশাসনকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও লুটপাটের পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অন্যতম সমন্বয়ক সামিয়া সানজানা বলেন, খুলনার পুলিশ কোনো নির্দিষ্ট দলের অধীনে কাজ করতে পারবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করতে হলে কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যেন কোনোভাবেই বেশি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, কোটার মাধ্যমে চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রবল অসহযোগিতা করায় কুয়েট ভিসি এবং তাঁর অনুগতদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।
সভায় শিক্ষার্থীরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খাবারের মানসহ নানা দুর্নীতি ও ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার, মিনহাজুল ইসলাম, বিপুল শাহরিয়ার, সাইফ নেওয়াজ, শাহাবুল, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী শেখ রাফসান, তারেক রহমান, ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী রুমি আক্তার, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মুস্তফা জায়েদ, সরকারি পাইওনিয়ার কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার, রাইসা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভার শেষ দিকে কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, কেএমপির থানায় সাধারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি মাসেই সমন্বয়কদের নিয়ে কেএমপিতে একটি সভা হবে। প্রথমে থানাভিত্তিক পুলিশিং কমিটিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের রাখা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকবে। খুলনার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার যাতে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং কোনো অজুহাত ছাড়া যাতে সেবা মেলে, এখনই সেই ব্যবস্থা করা হবে। অতীতে যা হয়েছে, হয়েছে। পুলিশ আর দলভিত্তিক বা লেজুড়বৃত্তির আচরণ করবে না। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ব্রজলাল কলেজে প্রথমে অস্থায়ী ক্যাম্প এবং পরে স্থায়ী ক্যাম্প করা হবে।
যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করছে, তারা যে দলেরই হোক না কেন নির্মোহভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মোজাম্মেল হক। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও খুলনার অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তাঁরা যদি অন্যায়ও করে তবু তাঁদের গ্রেপ্তারের আগে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলা হবে। খুমেক হাসপাতালে যদি দালাল–ফড়িয়া থাকে, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
বিজ্ঞাপন