বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৬ ১৭ জুলাই ২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ বাসভবনের সামনে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা আহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের আহত নেতার নাম রবিউল আলম ওরফে রবিন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তবে আহত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তোলা
ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। তাঁদের সবাই ছিলেন ছাত্রী। কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বসে তাঁরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সেখানে আসেন। তাঁরা অসৌজন্যমূলক আচরণ, অপ্রীতিকর অঙ্গভঙ্গি ও হুমকি দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরে যেতে বললেও তাঁরা সরেননি। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একপর্যায়ে তাঁদের গা ঘেঁষে ও সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় কলেজের সামনে ও কলেজপাড়ার লেভেল ক্রসিং এলাকায় ১০-১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। একপর্যায়ে সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা আফরিন সঙ্গে কিছু মেয়ে নিয়ে সেখানে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বোঝাতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে বসে কর্মসূচি পালন করে মিছিল বের করেন। আন্দোলনকারী অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও ওই মিছিলে এসে যোগ দেন।
এর বাইরে ছাত্রলীগের অপর একটি দল মোটরসাইকেলে লাঠিসোঁটা, কাঠের টুকরা ও বইঠা নিয়ে কলেজের সামনের সড়ক, লেভেল ক্রসিং এলাকা, নিউ মৌড়াইল ও কাউতলী এলাকায় মো. মহড়া দেয়। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে আসতে বাধা দেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী মোড় থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তোলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলী মোড় থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের কাউতলী মোড় থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীর হাতে বাঁশ ছিল। জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে ছাত্রলীগের নেতা রবিউল আহত হন। শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও বইঠা নিয়ে ধাওয়া করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারহানা শারমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ব্যানার টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেছে। এই দেশে সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বারবার কথা হয়। কোথায় গেল এসব। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে অপমানিত করেছে। কারণ, আমরা কোটার সংস্কারের দাবিতে এসেছি। আমার ভাই ও বোনের শরীরে থেকে যে রক্ত ঝরেছে, তার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের এই বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো বাধা দিইনি। তাদের কোনো দাবি থাকলে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিতে বলেছি। তাদের পানিসহ খাবার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের হামলায় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আহত হয়েছে। তার ডান চোখের ওপর চারটি সেলাই লেগেছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে খোঁজ নেবেন তাঁরা। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি তদন্তের বিষয়। শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বিজ্ঞাপন