বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:০৫ ৮ অক্টোবর ২০২৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী হেনস্তা, সমকামিতা প্রমোট, ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (০৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরে প্রধান ফটকে গিয়ে অবস্থান নেন তারা। এসময় প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীরা তাদের আশ্বাসে উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে 'দফা এক দাবি এক, হাফিজের পদত্যাগ', ‘হাফিজের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ ‘হাফিজের দুই গালে,জুতা মারো তালে তালে’, ‘সমকামী শিক্ষক, চাই না চাই না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই শিক্ষক জুলাই আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করায় ইনবক্সে হুমকি, ছাত্রলীগের দোসর হিসেবে আন্দোলনের পরে ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন, এটেনডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা। কথার অবাধ্য হলে ইন্টার্নাল নম্বর কমিয়ে দেওয়া। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করা। শিক্ষার্থীদের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মারার হুমকি, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা। দাড়ি থাকলে শিবির ট্যাগ দিয়ে তাকে হেনস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে তার স্ক্রিনশট নিয়ে তার অপছন্দনীয় শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা। শিক্ষার্থীদের বাবা-মা এবং তাদের রক্তে সমস্যা বলে গালমন্দ করা। ধর্মভেদে ছুটি নির্ধারণ করা। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যেদিন উপস্থিতি কম থাকে, সেদিন টিউটোরিয়াল কিংবা ক্লাস টেস্ট নেওয়া এবং যারা অনুপস্থিত তাদেরকে তার(হাফিজ) রুমে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা। ডিপার্টমেন্টে উপজাতি বন্ধুদের সাথে মিলামেশা করলে, তারা পাহাড়ি তারা মানুষ মারে বলে তাদের সাথে মিশতে বাধা দেওয়া। একজন শিক্ষার্থীকে থ্রেট দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জোরপূর্বক জিডি করানো এবং এ বিষয় উভয়পক্ষকে হেনস্থা করা। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে রেজাল্ট খারাপ করানো। অন্যান্য শিক্ষকদের শরণাপন্ন হতে না দেওয়া। অন্যান্য শিক্ষকদের নাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে অপমান, অপদস্থ এবং চাপ দেওয়া। শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের দোসর দিয়ে জোরপূর্বক হল থেকে নামিয়ে দেওয়া। মেয়েদের সকলের সামনে জামা কাপড় নিয়ে কথা বলা, নর্তকী, বাজারের মেয়ে, খানকি মাগি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া স্টক করে তাদের পোস্ট করা ছবি নিয়ে কাস্টমার ধরার ধান্দা এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলা এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা ফেইসবুকে কি পোস্ট করবে তা নির্ধারণ করা। ক্লাসের শিডিউল দিয়ে ডেকে এনে জোরপূর্বক তার জন্মদিন পালন করানো এবং যারা অনুপস্থিত তাদের হেনস্থা করা। ১৭-১৮ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে আরেক জুনিয়রের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। ১৭-১৮ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসের সকলের সামনে পতিতা বলা। ১৮-১৯ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসের সবার সামনে সে বাজারে ব্যবসা করে খায় বলে হেনস্থা করা। যারা কুষ্টিয়া শহরে থাকে তাদেরকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২/১টা পর্যন্ত অকারণে তার সাথে ঘুরতে বাধ্য করা এবং যদি কোন শিক্ষার্থী ঘুরতে যেতে নাকোচ করলে পরদিন ক্লাস থেকে তাকে বের করে দেওয়া এবং এসবের প্রভাব পরিক্ষার খাতায় পড়া।
এছাড়া শিক্ষকের পছন্দের শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা এবং ভাইভা পছন্দসই নাম্বার প্রদান এবং ও অন্যদের কম নম্বর দিয়ে একাডেমিক ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অভিযোগের বিষয় জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম কে একাধিক বার ফোন করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ শুনে উপাচার্য বলেন, তোমাদের সকল অভিযোগ লিখিতভাবে দাও। আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জুলাই আন্দোলনের পর অভিযোগ দেওয়া জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে দাবি আদায়ে অন্যের অসুবিধা যেন না হয়। এজন্য তিনি গাড়ি আটকিয়ে আন্দোলন না করার অনুরোধ করেন।
বিজ্ঞাপন