২০ শিশুকে বাঁচিয়ে না ফেরার দেশে শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী — এক অনন্য আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা

২০ শিশুকে বাঁচিয়ে না ফেরার দেশে শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী — এক অনন্য আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:০০ ২১ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় যখন গোটা দেশ শোকাহত, তখন এই ঘটনার মধ্য থেকে উঠে এসেছে এক নারীর অনন্য সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের গল্প। তিনি হলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি সেকশনের শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।

সেদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় স্কুলটির একটি ভবনের ওপর। তখন সেখানে ক্লাস চলছিল এবং ভবনের ভেতরে উপস্থিত ছিল বহু কোমলমতি শিশু। দুর্ঘটনার পর মুহূর্তেই চারদিক আগুন ও ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতেও শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী সাহস হারাননি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি একে একে অন্তত ২০ জন শিশুকে ভবনের ভেতর থেকে নিরাপদে বের করে আনেন। আগুন, ধোঁয়া, আতঙ্ক—কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। শিশুগুলোর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করেছেন।

তবে শেষরক্ষা হয়নি তার নিজের জন্য। সবশেষ শিশুটিকে বের করে দেওয়ার পর ভবনের একটি অংশ ধসে পড়লে তিনি সেখানে আটকে পড়েন এবং মারাত্মক দগ্ধ হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে রাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলেন, “মাহেরীন ম্যাডামের বীরত্ব না থাকলে আরও বড় ট্র্যাজেডি হতো।” এক অভিভাবক আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার সন্তান আজ বেঁচে আছে শুধু ওনার জন্য।”

এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৭১ জন। তাদের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। সরকার এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ২২ জুলাই মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি শুধু একজন শিক্ষিকা নন, ছিলেন একজন প্রকৃত বীর। তার সাহস, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মাহেরীন চৌধুরীর প্রতি। আপনার এই আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না।

বিজ্ঞাপন