মৃত্যুর আগে মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য, বিতর্কের ঝড়ে চার্লি কার্ক

মৃত্যুর আগে মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য, বিতর্কের ঝড়ে চার্লি কার্ক

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রভাবশালী রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ককে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী এই তরুণ রাজনীতিক ছিলেন জনপ্রিয় পডকাস্টার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শক্তিশালী প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত তাঁর অনুষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমসাময়িক নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে অংশ নিতেন তিনি। এসব আয়োজনে প্রায়ই হাজারো দর্শক উপস্থিত থাকতেন।

চার্লি কার্ক ছিলেন দৃঢ় ইসরায়েল সমর্থক। তিনি নিজেকে প্রকাশ্যে ‘ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান জায়োনিস্ট’ হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং দাবি করতেন, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসরায়েলের ভূমি বৈধ। তাঁর ভাষায়,

“ইসরায়েলকে সমর্থন করার ব্যাপারে আমার রেকর্ড অটুট। আমার জীবন ইসরায়েলে বদলে গেছে। আমি ইসরায়েলের জন্য লড়ব।”

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে তিনি বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করতেন এবং ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীর মৃত্যুকে হামাসের দায় হিসেবে উপস্থাপন করতেন। এমনকি গাজার দুর্ভিক্ষের অভিযোগ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমকে ইসরায়েলবিরোধী প্রচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

তবে এই অবস্থান মার্কিন রক্ষণশীল মহলে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করে। টাকার কার্লসনের মতো প্রভাবশালী রক্ষণশীলরা যখন প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নৃশংসতার সমালোচনা করেন, তখন কার্ক সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নেন।

কার্ক নিয়মিতভাবেই ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আজানের ধ্বনি শোনার বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন, ইসলাম পশ্চিমা খ্রিষ্টীয় জীবনধারার জন্য হুমকি।

এমনকি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কেও তিনি প্রকাশ্যে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করেন, যা ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। তাঁর মতে,

“পশ্চিমে এখন আধ্যাত্মিক লড়াই চলছে। আমাদের শত্রুরা হলো ‘ওক-বাদ’ ও মার্ক্সবাদ, যারা ইসলামের সঙ্গে মিলে আমাদের জীবনধারা আক্রমণ করছে।”

যদিও ইসরায়েল বিষয়ে তিনি দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন, তবে ইরান প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন ছিল। গত জুনে ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের পর তিনি প্রশ্ন তোলেন—যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ কতটা যৌক্তিক।

কার্ক স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন, ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইরানি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে অপসারণ করে শাহকে বসিয়েছিল, যার ফলেই পরবর্তী সময়ে আয়াতুল্লাহদের উত্থান ঘটে।

তিনি বলেন,
“পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ইরান হয়তো ইসরায়েলের জন্য হুমকি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা? ভারত, পাকিস্তানেরও তো পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তাহলে ইরানের জন্য নতুন যুদ্ধ কেন?”

এমনকি তিনি সতর্ক করে দেন যে, ইরানকে কেন্দ্র করে নতুন যুদ্ধ শুরু হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে ভয়াবহ অচলাবস্থা ডেকে আনবে।

চার্লি কার্কের বক্তব্য ও রাজনৈতিক অবস্থান ছিল তীব্র বিতর্কিত। ইসলাম ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাঁর কঠোর ও অনেক সময় অবমাননাকর মন্তব্য যেমন তাঁকে রক্ষণশীল মহলে জনপ্রিয় করেছিল, তেমনি অনেক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখেও ফেলেছিল। খুন হওয়ার আগে ইসরায়েল, ইরান ও ইসলাম প্রসঙ্গে তাঁর এসব অবস্থানই তাঁকে ঘিরে চলমান বিতর্ককে আরও জটিল করে তোলে।

বিজ্ঞাপন