শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ায় থামছেই না জেন-জি ঝড়। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পর এবার মঞ্চ নেপাল। মাত্র দুই দিনের মধ্যে দেশটির শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ছাত্র-বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন, সরকারি স্থাপনা এমনকি সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ১৯ জন ছাত্র। ব্যাপক চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগপত্র দিয়ে হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। অর্থমন্ত্রী গণপিটুনির শিকার হন এবং সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা আতঙ্কে গা-ঢাকা দেন।
বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থান কিংবা দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভ— নেপালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যেন তারই হুবহু পুনরাবৃত্তি। খুব ছোট একটি ইস্যু থেকেই শুরু হওয়া আন্দোলন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর ঝড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঝড়ের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ভারত।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সহযোগী দল শিবসেনার শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার এখনই যদি সচেতন না হয় তবে শেখ হাসিনা ও কেপি শর্মা অলির মতো পরিণতি ভারতের জন্যও অপেক্ষা করছে। এমনকি তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত খণ্ড খণ্ড হয়ে যেতে পারে।
নেপালে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে এটি শুধুই একটি অজুহাত ছিল। প্রকৃত কারণ আরও গভীরে লুকিয়ে আছে। দীর্ঘদিনের স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বই তরুণদের ক্ষোভকে বিস্ফোরিত করেছে।
শিবসেনার এমপি সঞ্জয় রউত এ প্রসঙ্গে বলেন, নেপালের যে স্ফুলিঙ্গ দেখা দিয়েছে তা ভারতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ভারতের সরকার কেবল মহাত্মা গান্ধীর অহিংস মতবাদের কারণেই টিকে আছে। তিনি সতর্ক করেন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং স্বৈরাচারী শাসন অব্যাহত থাকলে ভারতীয় তরুণরাও বিদ্রোহে নামতে পারে। মোদির সরকার এখনও টিকে আছে গান্ধীর আদর্শের ভরসায়, নাহলে ভারতের পরিস্থিতিও নেপালের মতো হতো।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় কাজ হলো তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রশাসন সংস্কার এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া। শুধু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা দিয়ে জেন-জি ঝড় ঠেকানো সম্ভব নয়। তরুণ সমাজকে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করা, স্বচ্ছ প্রশাসনিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক সমতার দিকে মনোযোগ দেওয়াই হবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
বিজ্ঞাপন