মঙ্গলবার , ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০২:৩৭ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নেপালের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াল। গত বছরের ৫ আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ, একই পরিস্থিতিতে পতনের মুখে পড়লেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে রূপ নেয়, যা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
শেখ হাসিনা গণআন্দোলনের চাপে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রীরও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের মতো নেপালেও জনদাবি উপেক্ষা করাই নেতাদের পতনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যারা একসময় ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারায়। নেপালের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্যপট দেখা গেছে। রাজতন্ত্র উচ্ছেদে ভূমিকা রাখা কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনিফাইড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) আজ জনরোষের শিকার হয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে।
দুই দেশেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল তরুণ প্রজন্ম। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে সূচিত আন্দোলন দমন-পীড়ন ও প্রাণহানি সত্ত্বেও থামেনি। একইভাবে নেপালে ‘জেন জি’ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদ থেকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জনঅভ্যুত্থান গড়ে তোলে।
বাংলাদেশে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা। অন্যদিকে, নেপালে দুর্নীতি, ‘নেপো কিডস’ ও রাজনৈতিক পরিবারগুলোর বিলাসী জীবনধারা আন্দোলনের ইন্ধন জোগায়। দুই দেশেই তরুণরা ন্যায্য সুযোগ ও অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে আসে।
সরকারগুলো আন্দোলন দমাতে কঠোর অবস্থান নেয়। বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার আন্দোলনকারী নিহত হন এবং নেপালে অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারান। কিন্তু এসব সহিংসতা আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়; বরং আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও কেপি শর্মা অলি—দুজনকেই জনতার চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
বিজ্ঞাপন