শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ | ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:২৬ ২৪ জুলাই ২০২৫
চীন দক্ষিণ তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে, যা নিয়ে ইতোমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পটি ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর উপর গড়ে তোলা হচ্ছে, যা ভারত অংশে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে যমুনা নামে প্রবাহিত। তবে এসব উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে চীন দাবি করেছে, এটি তাদের ‘সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত’ এবং এই প্রকল্পের কারণে নদীর নিম্নপ্রবাহে অবস্থিত কোনো দেশ ক্ষতির মুখে পড়বে না। গত ২৩ জুলাই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই প্রকল্প নিচু এলাকার কোনো দেশকে ক্ষতির মুখে ফেলবে না।” তিনি আরও জানান, প্রকল্পটি নির্মিত হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখবে।
চীনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্প নির্মাণে সর্বোচ্চ পরিবেশগত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সংবেদনশীল অঞ্চলে প্রকল্পের কাজ না করাসহ, নদী অববাহিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যতটা সম্ভব অক্ষত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। প্রকল্পটি পাঁচটি ধাপে গঠিত হবে এবং এতে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে বছরে আনুমানিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, যা বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম বাঁধ—চীনের থ্রি গর্জেস ড্যামের তিনগুণ।
বেইজিং বলছে, এই মেগা প্রজেক্ট তাদের কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের পথকে মজবুত করবে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে ২০৬০ সালের মধ্যে পুরোপুরি কার্বন নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রূপ নিতে চায়। এই লক্ষ্য অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ হিসেবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া, চীন দাবি করেছে, তারা আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর ব্যবস্থাপনায় সবসময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং নিম্নপ্রবাহে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে তথ্য ও সহযোগিতা বিনিময় অব্যাহত রয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাঁধ নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার পানিনির্ভরতা, পরিবেশ এবং ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যারা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য নদীর উজানে এমন একতরফা প্রকল্প বাস্তবায়ন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও চীন আশ্বস্ত করেছে যে তারা সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখবে, তারপরও প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ও কূটনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন