সোমবার , ২১ জুলাই, ২০২৫ | ৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৪২ ২১ জুলাই ২০২৫
রাজবাড়ীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে চাঁদাবাজদের কারণে। হাসপাতালের লিফট স্থাপনের কাজে একের পর এক বাধা সৃষ্টি করছে স্থানীয় একাধিক চাঁদাবাজ চক্র। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা।
রোববার (২১ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজবাড়ীর অফিসার ক্লাবে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় হাসপাতাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি জানতে চান জেলা প্রশাসক। কিন্তু সভায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উপস্থিত না থাকলেও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান,“লিফট স্থাপন কাজে বারবার স্থানীয় চাঁদাবাজদের হুমকি আসছে। একদল থেকে চাঁদা দেওয়ার পর আরেকদল এসে আবার দাবি করছে। এতে ঠিকাদারদের পক্ষে কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আরও জানান, শুধু চাঁদাই নয়— এর আগে হাসপাতালের এসি ও আউটডোরের বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়েছে। কাজের সাইটে হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে চাঁদাবাজরা। এমনকি শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ফলে লিফটের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ ঘটনার আগেও এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি লিখিত অভিযোগ পাঠান রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে।
সেই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ইনচার্জ এবং রাজবাড়ী সদর থানার ওসির কাছেও পাঠানো হয়।
এরপর ২১ জানুয়ারি গণপূর্ত বিভাগ থেকে সদর থানার ওসিকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতেও একই নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ১৯ জানুয়ারি রাতের দিকে ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি প্রকল্প এলাকায় ঢুকে চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে মালামাল ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর শঙ্কা তৈরি হয়।
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাষ্ট্রের সবচেয়ে মানবিক জায়গা হলো হাসপাতাল। সেখানে চাঁদা চাওয়া শুধু বেআইনি নয়, এটি মানবতাবিরোধী কাজ। সরকার ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
এদিকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রাজবাড়ীতে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে, পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।”
২০১৮ সালে রোগীদের ভোগান্তি কমাতে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ শুরু হয়।
বর্তমানে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের লিফট স্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু চলমান চাঁদাবাজির কারণে কাজের গতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন