বিএনপি-জামায়াতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি শেখ হাসিনা— সাবেক সেনাপ্রধানের বিস্ফোরক দাবি

বিএনপি-জামায়াতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি শেখ হাসিনা— সাবেক সেনাপ্রধানের বিস্ফোরক দাবি

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৭:১০ ২৫ মে ২০২৫

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পেছনের কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেন, ওই নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ছয় মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি গোপন সমঝোতা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তার মতে, তখন একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তার ও তার বাহিনীর দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র সংবিধানের প্রতি আনুগত্য পালন করা। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, রাজনৈতিক দল বা নেতার প্রতি আনুগত্য নয়, বরং সংবিধানই সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নির্দেশনা হওয়া উচিত।

জেনারেল ভূঁইয়া তার স্ট্যাটাসে অতীতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বসাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধিতায় ‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ শুরু করে। বিচারপতি কে এম হাসানকে গ্রহণ না করায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানের দায়িত্ব নেন, যা রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের চাপে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন স্থগিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে।

জেনারেল ভূঁইয়া দাবি করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এমনই এক সংকট তৈরি হয়, যেখানে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন জিতে নেয়। তখন কিছু পশ্চিমা দূতাবাসের মধ্যস্থতায় একটি গোপন সমঝোতা হয় যে, ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।

তিনি বিএনপির একটি অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বিএনপি সেনাবাহিনীকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সহায়তার অভিযোগ করলেও তারা কখনোই প্রমাণ দিতে পারেনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি কখনোই মইন ইউ আহমেদের মতো সেনাশাসন কিংবা সামরিক হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করতেন না। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, সেনাপ্রধান হিসেবে তার সময়ে কোনো রাজনৈতিক চক্রান্তে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়নি।

স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলির একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “সেনাপ্রধানের আনুগত্য কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দল নয়, বরং সংবিধানের প্রতি।” তিনি সংবিধানকে জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যকার একটি পবিত্র চুক্তি হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সেনাবাহিনীর নয়, রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব।

সবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীকে নির্বাচন-পরবর্তী বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে রাখতে পেরেছেন বলেই তিনি স্বস্তিবোধ করেন। তার মতে, কোনো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যায় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা উচিত নয়।

এই বিস্ফোরক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পেছনে থাকা সমঝোতা ও ভাঙন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং আগামীর রাজনীতিতে এ ধরনের বক্তব্য গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিজ্ঞাপন