রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ | ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:২১ ২৪ মে ২০২৫
বাংলাদেশে এখন থেকে একজন মোবাইল গ্রাহক তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১০টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। এতদিন পর্যন্ত এই সীমা ছিল ১৫টি। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই সংখ্যা কমিয়ে ১০-এ নামিয়ে এনেছে।
শনিবার (২৪ মে) বিটিআরসি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অনুশীলন, জাতীয় নিরাপত্তা, এবং দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে। বিটিআরসি বলেছে, একজন গ্রাহকের নামে অতিরিক্ত সিম রাখার সুযোগ থাকলে তা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, প্রতারণা এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সীমা কমানো হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের নামে থাকা প্রায় ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। যেসব গ্রাহকের নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত আছে, তাদের সিমগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিটিআরসি এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের আলাদা নির্দেশনা দেবে।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, “২০১৭ সালে প্রথমবার একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন এই সংখ্যা কিছুটা যৌক্তিক হলেও বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। নিরাপত্তা ও সঠিক তথ্য ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আমরা সীমা ১০-এ নামিয়ে এনেছি।”
তিনি আরও জানান, সিম সীমা কমিয়ে আনার এই সিদ্ধান্তের ফলে নকল এনআইডি ব্যবহার, অবৈধভাবে সিম ব্যবহার, এবং টেলিকম প্রতারণা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও তথ্য যাচাইয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অক্টোবরে বিটিআরসি একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছিল, যাদের নামে ১৫টির বেশি সিম রয়েছে, তারা যেন তাদের পছন্দমতো ১৫টি রেখে অতিরিক্তগুলো ডিরেজিস্টার করে ফেলেন। যেসব গ্রাহক তা করেননি, তাদের অতিরিক্ত সিম পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে নতুন ১০ সিম সীমা নীতিমালা কবে থেকে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে বিটিআরসি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে শিগগিরই একাধিক ধাপে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো হবে এবং গ্রাহকদেরও জানানো হবে এসএমএস বা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
গ্রাহকের করণীয়:
যেসব মোবাইল গ্রাহকের নামে বর্তমানে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত আছে, তাদের জন্য নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা জরুরি:
নিজের নামে কয়টি সিম আছে তা চেক করুন (পদ্ধতি নিচে দেওয়া হয়েছে)
যদি ১০টির বেশি সিম থেকে থাকে, তবে পছন্দের সিম রেখে বাকি সিমগুলো ডিরেজিস্টার করুন
নিজে ডিরেজিস্টার না করলে বিটিআরসি লটারির মাধ্যমে যেকোনো সিম বন্ধ করে দিতে পারে
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন
নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অন্য কাউকে সিম রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহার করতে দেবেন না
সিম চেক করার নিয়ম (NID অনুযায়ী):
নিচের পদ্ধতিতে আপনি সহজেই জানতে পারবেন, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কতটি সিম রেজিস্টার করা হয়েছে এবং কোন অপারেটরের সিম আছে—
সকল অপারেটরের জন্য:
১. আপনার মোবাইল থেকে dial করুন:
*16001#
২. এরপর আপনার NID নম্বর লিখে পাঠান
৩. কিছুক্ষণের মধ্যেই SMS-এর মাধ্যমে আপনার নামে কতটি সিম রেজিস্টার করা আছে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে
বিকল্পভাবে, আপনি SMS দিয়েও জানতে পারেন:
SMS করুন: info <space> NID নম্বর
পাঠাতে হবে: 16001 নম্বরে
বিটিআরসির অফিসিয়াল লিংক ও তথ্যসূত্র:
বিটিআরসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:
https://www.btrc.gov.bd
সিম রেজিস্ট্রেশন চেক/তথ্য যাচাই পোর্টাল:
https://simreg.btrc.gov.bd
অভিযোগ বা যোগাযোগের ইমেইল:
info@btrc.gov.bd, বিটিআরসির হেল্পলাইন: ১০০
সতর্কবার্তা:
বিটিআরসি জানিয়েছে, অতিরিক্ত সিম রাখলে সেটি আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতে পারে। তাই নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে সিম ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিজের NID দিয়ে অন্য কারও নামে সিম রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিলে বা নিজের অজান্তে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার হলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন