বন্ধ হচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউবসহ আ. লীগের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম!

বন্ধ হচ্ছে ফেসবুক-ইউটিউবসহ আ. লীগের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম!

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ১০:৩৩ ১৪ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সকল ধরনের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। এসব সংগঠনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, টিকটক, টেলিগ্রাম ও এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টগুলো ‘ব্লক’ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে চিঠি দিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

এর আগে, গত সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এসব সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রচার-প্রকাশনা, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী।

একই দিনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। ফলে দলটির সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক স্বীকৃতিও আপাতত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো ব্লক করতে শিগগিরই ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত এবং দেশের প্রচলিত আইনের কথা উল্লেখ করে এসব চিঠিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকারের হাতে সরাসরি সবকিছু বন্ধ করার ক্ষমতা নেই। সরকার শুধুমাত্র দেশের ভেতরে ওয়েবসাইট ব্লক করতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট সরানো বা অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ওই প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতিমালার আওতায় পড়ে। এজন্য মেটা (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টদের কাছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়মিতভাবে অনুরোধ করে থাকে।

মেটার প্রকাশিত সর্বশেষ স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে বিটিআরসির অনুরোধে বাংলাদেশে মোট ২,৯৪০টি কনটেন্টে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে গুগলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯০টি অনুরোধে মোট ৫,৮২৭টি কনটেন্ট সরানোর আবেদন জানানো হয়। প্রথম ৬ মাসে করা ৩৩৭টি অনুরোধের মধ্যে গুগল ৬৮.২ শতাংশ অনুরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, আর পরবর্তী ৬ মাসে এই অনুপাত ছিল ৪৫.৮ শতাংশ।

সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলীয় প্রচার, সংগঠনের ডিজিটাল উপস্থিতি এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা যেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে, সে প্রেক্ষাপটে এই নিষেধাজ্ঞা বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সরকারের অনুরোধে কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

বিজ্ঞাপন