জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়নি: তাজুল ইসলাম

জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়নি: তাজুল ইসলাম

চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৫:০৯ ১৩ মে ২০২৫

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে এসব ঘটনা ‘গণহত্যা’র সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

সোমবার (১২ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন দাখিলের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলাদেশে সংঘটিত এসব সহিংসতা গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হয় না। তিনি বলেন, “যেসব অপরাধ হয়েছে তা ‘ক্রাইমস এগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ; এগুলো ম্যাস কিলিং বা ম্যাসাকার হতে পারে, কিন্তু জেনোসাইড নয়।”

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো—তিনি এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের 'মাস্টারমাইন্ড', 'হুকুমদাতা' এবং 'সুপিরিয়র কমান্ডার' হিসেবে কাজ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তৃতা, বিশেষ করে ১৪ জুলাইয়ের বক্তব্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'রাজাকারের সন্তান' বলে আখ্যা দেওয়া, ছিল বড় ধরনের উসকানি। ওই বক্তব্যের পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে।

এই মামলায় অভিযুক্ত বাকি দুইজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁদের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদনের চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। এরপর শুরু হবে মামলার বিচার কার্যক্রম।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সংশোধিত আইনে এখন সে ধরনের তদন্তের সুযোগ রয়েছে। তদন্ত সংস্থা চাইলে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ শেখ হাসিনার সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। তবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তাঁর সরকারের পতনের পর আইন সংশোধন করে সমসাময়িক মানবতাবিরোধী অপরাধও বিচারযোগ্য করা হয়।

এটাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল হওয়া প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরুর দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

বিজ্ঞাপন