দুই সিটি নয়, এক ঢাকা চায় কমিশন

দুই সিটি নয়, এক ঢাকা চায় কমিশন

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৩:৪৭ ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ—বর্তমানে বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশনকে পুনরায় একীভূত করে একটি একক মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। গত ২০ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তরিত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।

কমিশনের মতে, বিভক্ত কাঠামোর ফলে কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং এতে প্রশাসনিক জটিলতা, দায়িত্ব বিভাজনের দ্বন্দ্ব এবং সেবা বিভ্রান্তি বেড়েছে। তারা মনে করেন, একটি একক করপোরেশন গঠন করলে কার্যকারিতা ও সমন্বয় বাড়বে।

কমিশনের প্রস্তাবিত মডেল অনুসারে, ঢাকায় গঠিত হবে একটি কেন্দ্রীয় সিটি করপোরেশন এবং এর অধীনে থাকবে অঞ্চলভিত্তিক ২০টি ‘সিটি কাউন্সিল’। প্রতিটি কাউন্সিল গঠিত হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ৯ থেকে ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে, যা নির্ধারিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে।

এসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন সরাসরি জনগণের ভোটে। তবে মেয়র নির্বাচিত হবেন পরোক্ষভাবে—নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে। কমিশনের মতে, এই ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে অংশগ্রহণ, সেবায় দায়বদ্ধতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।

কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আট সদস্যের টিম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১১ সালে দুই সিটিতে বিভক্ত হওয়ার পর কাঠামোগত জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা নাগরিক সেবা ব্যাহত করেছে। তাই অঞ্চলভিত্তিক কাউন্সিলের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগাভাগির প্রস্তাব তাদের মতে সময়োপযোগী।

তবে প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার মূল সমস্যা কাঠামোগত নয়, বরং প্রশাসনিক জবাবদিহিতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির সংস্কৃতিতে নিহিত।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, “একাধিক সিটি থাকলে দায়িত্ব বণ্টন সহজ হতে পারে, তবে যদি দক্ষতা ও সমন্বয় না থাকে, কাঠামো বদল কোনো কাজে আসে না।”

নাগরিকদের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। উত্তরার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, “দুই মেয়রের সমন্বয়ের অভাব আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই। রাস্তা খোঁড়া হয়, কিন্তু মেরামত হয় না। এক হলে হয়তো সমন্বয় বাড়বে, তবে দুর্নীতির সংস্কৃতি না ভাঙলে কিছুই হবে না।”

মিরপুরের এক স্কুলশিক্ষিকা ফারজানা হোসেন বলেন, “সিটি এক হোক বা দুই, মশা মরছে না, রাস্তা ঠিক হচ্ছে না। প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকলে কাঠামো দিয়ে কিছু হবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, “ঢাকার জনসংখ্যা বিবেচনায় দুটি সিটি করপোরেশন যৌক্তিক হলেও, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন। মেয়র নির্বাচন যদি পরোক্ষভাবে হয়, তবে তা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী হবে।”

এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ঢাকার প্রশাসনিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসবে। তবে এখন দেখার বিষয়—সরকার এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা বাস্তবায়নের পথে কতদূর অগ্রসর হয়।

বিজ্ঞাপন