বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০৫ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
টাঙ্গাইলের বাসাইলে বিলের শত শত একর জমিতে ফুটে থাকা শাপলা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। লাল শাপলার ফুল ফুটে তাই খ্যাতি পাচ্ছে লাল শাপলার বিল নামে। রোদের তাপে নুইয়ে পড়ে বলে ভোরের সূর্য উঠার আগেই লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন নানা প্রান্তের মানুষ। তবে বিলে নৌকা না থাকায় দর্শনার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ফুটে থাকা কাঁশফুল জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষা শেষে শরতের আগমন। তবুও বর্ষার স্নিগ্ধতার রেশ প্রকৃতিতে এখনো রয়েছে। খালে-বিলের থৈ থৈ জলে ফুটে আছে শাপলা। শরতের সকালে হালকা কুয়াশায় সূর্যের কিরণ পড়ে শাপলার সবুজ পাতা আর লাল পাপড়িতে জমে থাকা শিশির মুক্তার মতো চিকমিক করছে। এমন অপূর্ব নান্দনিক ক্ষণের সাক্ষী হতে ছুটে এসেছেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের নিতু খান ও মিম হাসান।
নিতু খান বলেন, ‘টাঙ্গাইল শহর থেকে ভোর সকালে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে শাপলা বিলে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের টাঙ্গাইলেও এত সুন্দর শাপলা বিল আছে, জানতাম না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গার শাপলা ঝিলের ছবি ও ভিডিও দেখি। আমাদের টাঙ্গাইলে যে এত সুন্দর শাপলা বিল আছে, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’
মিম হাসান বলেন, ‘বান্ধবীদের এখানে আসতে দেখেছি। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। সকালে ভাইকে নিয়ে ঘুরতে চলে এসেছি। এসে ছবি উঠলাম। খুবই ভালো লাগল। চারিদিকে শুধু লাল শাপলা। এ এক অপরূপ সৌন্দর্য। শাপলা ফুলের মায়ায় মন আটকে গেছে।’
তবে শুধু লাল শাপলাই নয়, এরই মাঝে নান্দনিক হয়ে ধরা দিচ্ছে সাদা শাপলা। সবুজ পাতার ফাঁকে মাথা উঁচু করে ভেসে বেড়াচ্ছে ব্যাঙ, বাতাসে চঞ্চল ফড়িংয়ের উড়াউড়ি। প্রকৃতির এসব সহচরী দর্শনার্থীদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। তাই সদ্য খ্যাতি পাওয়া লাল শাপলার বিলে দিন দিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়ছে।
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরে ইচ্ছে ছিল লাল শাপলার সঙ্গে ছবি তুলবো। আজ ইচ্ছেটাকে পূর্ণতা দিলাম। ভোর বেলায় লাল শাপলাগুলো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। লাল শাপলার রাজত্ব মনকে প্রফুল্ল করে তুলেছে।”
কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ফাহিমা খাতুন বলেন, “এত লাল শাপলা আমি কখনো দেখি নাই। আমি বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছি। হাজার হাজার লাল শাপলা ফুল ফুটেছে। প্রকৃতি যেন অন্যরকম সাজে সেজেছে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। কাঁদা পাড়িয়ে ছবি তুলতে যেতে হয়। এখানে যদি নৌকার ব্যবস্থা থাকত তাহলে আরও দর্শনার্থীদের ভিড় হবে।”
তবে কেবল সৌন্দর্য উপভোগই নয়, এই লাল শাপলা হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষের জীবিকার উৎসও। এখান থেকে প্রতিদিন আহরণ করা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার শালুক। শাপলা আহরণকারী মাজেদা বেগম বলেন, ‘পানি এলে এই শাপলা তুলে বিক্রি করি। কয়েক দিন ভালোই সংসার চালাই। পানি যে কয়েক দিন আছে, ভালো টাকা কামাই করতে পারব।’
আগামী মৌসুমে নৌকাসহ পর্যটন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা গেলে এই শাপলা বিলকে কেন্দ্র করে তৈরি হতে পারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
বিজ্ঞাপন