বেনাপোলে হারিয়ে যাচ্ছে পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল দাঁড়ি কাটার দৃশ্য

বেনাপোলে হারিয়ে যাচ্ছে পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল দাঁড়ি কাটার দৃশ্য

বেনাপোল প্রতিনিধি, যশোর:
বেনাপোল প্রতিনিধি, যশোর:

প্রকাশিত: ১১:১৮ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যশোরের শার্শা উপজেলায় বেনাপোলে,মানুষ স্বভাবগতই সুন্দরের পূজারী। চুল দাঁড়ি মানুষের সৌন্দর্য বহন করে। এই চুল- দাঁড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। এই কারণেই ‘নরসুন্দরদের’ কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল-দাঁড়ি কেটে মানুষকে দেখতে সুন্দর করাই যাদের কাজ তারাই হলেন ‘নরসুন্দর’। যারা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।


আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ফলে আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গতিধারায় এসেছে পরিবর্তন, লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের সেলুন। কদর বেশি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন সেই সব সেলুনগুলোর দিকেই।
এখনো হাট-বাজারে, গ্রামগঞ্জের পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল-দাঁড়ি কাঁটে ‘নরসুন্দরেরা’ হাঁটুর নিচে মাথা পেতে আবহমান বাংলার মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটার রীতি চলে আসলেও সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না।
হারানোর পথে আবহমান কাল ধরে চলে আসা এই গ্রামীণ ঐতিহ্য। উপজেলা অনেক হাট-বাজারে এখনো চোখে পড়ে চীর চেনা এই দৃশ্য। অল্প খরচের কথা মাথায় রেখে এখনো তাঁদের কাছে অনেকেই চুল-দাঁড়ি কাটান।
উপজেলার বর্তমান বেনাপোল পৌরসভা, ইউনিয়নের (সাবেক)বাসিন্দা বর্তমান সুশীল, বংশ পরিক্রমায় হয়েছেন নরসুন্দর।তার বাবা  দীর্ঘ ৪০বছর ধরে এ পেশায় ছিলেন। বেনাপোল হাই স্কুলের সামনে, যশোর কলকাতা রোড চিকন রাস্তার পাশে।  শিশু গাছের তলায় ইট পেতে তারা বসতেন, চুল দাড়ি কাটার জন্য। ওই সময় কাটার স্টাইল ছিল অন্য রকম  ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সে, ও শিশুদের দুই হাটুর মাঝখানে মাথা চেপে ধরতেন চুল কাটার স্টাইল অন্যরকম। আজ আর ঐরকম সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে না।

নাভারন বাজারে দেখা হয় মতিলালের সঙ্গে। তার বয়স বর্তমান ৬০ বছর। তিনি বলেন আমার বাবা হীরালাল মারা গেছে তিনি ওই পেশায় ছিলেন 
শার্শা ইউনিয়ান  নাভারণ বাজার কলেজের সামনে, সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাজ করেন তিনি। তার মৃত্যুর পর বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রাখার মতো তার বংশে এমন কেউই নেই।

তিনি আরো জানান,অনেক বছর আগে চুল কাটা বাবদ দিতে হতো ৩টাকা আর দাঁড়ি কাটার জন্য ২ টাকা। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালো ভাবেই  চলতো। কিন্তু বর্তমানে ৫০/৮০টাকায় চুল ও ৩০/৫০ টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। 
সাবুদ্দিন  নামে এক ব্যক্তি জানান,এখনতো উপজেলায় অনেক আধুনিক সেলুন আছে।কিন্তু যখনই বাজারে যাই ও-ই চুল কাটা দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।চিরচেনা এ-ই দৃশ্য ছোটবেলায় স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান,আমরা এখনো এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও, এমন একটা সময় আসবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই দৃশ্য গল্পই মনে হবে।

বিজ্ঞাপন