ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড, জরিমানা আদায়ে ধর্ষকের জমি বিক্রির নির্দেশ

ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড, জরিমানা আদায়ে ধর্ষকের জমি বিক্রির নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪ ২১ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুরে ১৩ বছর বয়সী এক শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে নুরুদ্দীন মোল্লা (৫৭) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং ওই জরিমানার টাকা ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নুরুদ্দীন মোল্লা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ের অংশ হিসেবে আদালত নির্দেশ দেন—নুরুদ্দীন মোল্লার মালিকানাধীন জমিজমা বিক্রি করে জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা আদায় করতে এবং সেই অর্থ ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে দিতে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে (জেলা কালেক্টর) বলা হয়েছে। 
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের এ নির্দেশনা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব সংযোজন হিসেবে রয়ে যাবে।
নুরুদ্দীন মোল্লা ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কোষাগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা। মৃত ইসমাইল মোল্লার ছেলে নুরুদ্দীন ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই।
২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সেদিন বিকেলে ভুক্তভোগীর বাবা, মা ও ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আত্মীয়কে দেখতে ফরিদপুর শহরে যান। সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে নুরুদ্দীন মোল্লা প্রতিবন্ধী কিশোরীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করেন। কিশোরীর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে নুরুদ্দীন পালিয়ে যান।
পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় নুরুদ্দীন মোল্লাকে একমাত্র আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত করেন কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ। দীর্ঘ তদন্তের পর তিনি ৩১ জুলাই ২০২৪ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যেখানে নুরুদ্দীনকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গোলাম রব্বানী বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। ধর্ষণ একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। এই রায় সারা দেশে ধর্ষণজনিত অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি আসামির জমি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন দৃষ্টান্ত।”
২০১৮ সালের আইন সংস্কার ও সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কড়াকড়ির কারণে দেশে ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের এই রায় সেই প্রক্রিয়ারই এক বাস্তব প্রতিফলন।

বিজ্ঞাপন